সদর উপজেলার নয়টি ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, সব কটি ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায়; বেশির ভাগেরই নেই পরিবেশসম্মত উঁচু জিগজ্যাগ চিমনি। সব কটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, অনেকগুলোর সামনে রাখা আছে অল্পকিছু কয়লা।
এ কথা স্বীকারও করছেন ইটভাটার মালিকরা।
জেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলায় মোট ৬৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টিতে আছে পরিবেশসম্মত জিগজ্যাগ চিমনি।
তিনি স্বীকার করছেন, “বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে কয়লার সরবরাহ রয়েছে। তবু কেউ কেউ লুকিয়ে কাঠ ব্যবহার করছেন।”
কেএমবির শ্রমিক বকুল হাসান বলেন, “এখানে দৈনিক কমবেশি ২০০ মণ কাঠ পুড়ছে।”
এ ভাটায় কাঠ সরবরাহ করেন ট্রাকচালক মাইনুদ্দিন। তিনি বলেন, “প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি ২৫০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ কেএমবিতে নিয়ে আসি। এ কাঠ দিয়েই এখানে ইট পোড়ানো হয়।”
কেএমবির মালিক মুসারুল হকও সে কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, “বর্তমানে কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।
“তাই কয়লার বদলে কাঠ পোড়াচ্ছি। শুধু আমার ভাটা নয়, জেলার সব ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়।”
এসব ভাটার কারণে শুধু বনই উজাড় হচ্ছে না, জনস্বাস্থ্য ও কৃষিও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আবু মো. খয়রুল কবীর বলেন, “ইটভাটার ধোঁয়ায় টক্সিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
“এছাড়া ভাটার তাপে মানুষের ত্বকে বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দেয়।”
কেএমবি ব্রিকসের পাশে বসবাসকারী কামাল হোসেন বলেন, “ইটভাটার কারণে জমির উৎপাদনক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় মানুষ, পশুপাখি, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।”
এসব আইন জেলার বেশির ভাগ ইটভাটা মানছে না।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেখা গেছে নিষ্ক্রিয়। অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামন বলছেন, “ঠাকুরগাঁওয়ের ইটভাটাগুলোয় অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানে হচ্ছে শুনেছি।
“কিন্তু আমরা কী করব, আমাদের পর্যাপ্ত জনবল ও নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান চালাতে পারছি না। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখা হবে।”
আর জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলছেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ রকম বিভিন্ন বিষয়ে তারা প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে আসছেন বছরের পর বছর। ব্যবস্থা নিতে নিতে পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।