উপজেলার বানদীঘি গ্রামে শুক্রবার রাতে কোনো এক সময়ে ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার দুপুরে দুই ঘণ্টার অপারেশনের পর বর্তমানে তাকে ‘পোস্ট অপারেটিভ’ কক্ষে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তার অপারেশন করা হয়েছে।
“মাথায় ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে হাড় ভেঙে গেছে। এতে মগজের ক্ষতি হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই ছাত্রীর মা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির দুটি কক্ষের একটিতে তিনি স্বামী ও ছোট দুই সন্তান এবং আরেকটিতে মেয়ে থাকে। চারদিকে দেওয়াল ঘেরা বাড়ির গেইটে ও দুটি কক্ষের সামনে বারান্দায় তালা থাকে।
“ওই রাতে দুর্বৃত্তরা দেওয়াল টপকে বাড়ির আঙিনায় ঢোকে; কিন্তু ভুলে বারান্দার তালা দেওয়া না থাকার সুযোগে তারা মেয়ের কক্ষের ঢুকে এই নির্যাতন চালায়।”
ওই ছাত্রীর এক আত্মীয় হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জয়পুরহাটের ওই এলাকায় ইদানিং মাদকের উপদ্রব বেড়ে গেছে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিচরণ শুরু হয়।
ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ওই আত্মীয় বলেন, তার ধারণা মাদক সেবন বা বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত কোনো চক্র এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এদিকে ওই ছাত্রীকে দেখতে সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এই পশুর তুল্য কাজটি যারা করেছে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
এ ঘটনায় শনিবারই মেয়েটির চাচা বাদী হয়ে কালাই থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার অভিযোগ, গভীর রাতে ওই ছাত্রীর বাড়ির প্রাচীর টপকে প্রথমে তার বাবা-মার ঘরের দরজায় শেকল তুলে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে মেয়েটির ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।
অভিযোগে বলা হয়, ভোর রাতের দিকে মেয়েটির মা শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বুঝতে পারেন দরজা বাইরের দিক থেকে লাগানো। তখন শোর-চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে দেয় এবং পাশের ঘর থেকে থেকে মেয়েটিকে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি নিয়ে যায়।
কালাই থানার ওসি নুরুজ্জামান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপরাধী যেই হোক দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে তার আগে মেয়েটির জবানবন্দি খুবই জরুরি; কিন্তু সংজ্ঞাহীন থাকায় তা এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।”
এদিকে ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বানদীঘি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেন, স্কুল শিক্ষক ফজিলাতুন্নেছা বলেন, স্কুলে যাতায়াতের পথে মেয়েটিকে কয়েকজন মাদকাসক্ত উত্ত্যক্ত করত।
মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম আহসান হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, “এখনও মেয়েটির সংজ্ঞা ফিরেনি। তার মুখ থেকে ঘটনা শোনার পর দোষীদের শাস্তির জন্য এলাকাবাসীদের নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলব।”
তবে অপরাধের বিভিন্ন সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্তে কাজ চলছে। এ রকম অবস্থায় পুলিশকে কিছুটা সময় দিতে হবে বলে জানান ওসি।