আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ: আরও ১৩৫ শ্রমিক বরখাস্ত

শ্রমিক অসন্তোষ ঘিরে বরখাস্ত, মামলা ও আটকের মধ্যে আশুলিয়ায় উইন্ডি অ্যাপারেলসের পর আরেকটি পোশাক কারখানার ১৩৫ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তের নোটিস ঝুলিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2016, 12:14 PM
Updated : 22 Dec 2016, 12:14 PM

বৃহস্পতিবার বাইপাইল এলাকার ‘ফাউন্টেন গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড’ কারখানার বরখাস্ত এই শ্রমিকদের রঙিন ছবিসহ নোটিস মূল ফটকে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এ নিয়ে ফাউন্টেন ও উইন্ডির ২৫৬ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করা হলো।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বুধবার ১২১ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে উইন্ডি কর্তৃপক্ষ।

আশুলিয়া থানার এসআই শাহাদাৎ হোসেন জানান, শ্রমিক অসন্তোষের সময় উসকানি দিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শ্রম আইনে কারখানাটির ১৩৫ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাময়িক বরখাস্ত শ্রমিকদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় ডাকযোগে নোটিসের কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এছাড়াও বুধবার উইন্ডি অ‌্যাপারেলস লিমিটেড ও ফাউনটেইন গামের্ন্টস কর্তৃপক্ষ ২৪৯ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ‘উসকানি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করে।

মামলা হওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জামগড়া এলাকা থেকে মাসুদ ও বাকের নামের দুই শ্রমিক ও পরে পাঁচ শ্রমিক নেতাকে আটক করে। এরপর গভীর রাতে আরও দুই শ্রমিক নেতা ও ১০ শ্রমিককে আটক করা হয় বলে আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির জানান।

বুধবার আটকদের মধ্যে সাত শ্রমিক নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সৌমিত্র কুমার দাশ, গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আল কামরান, সাধারণ সম্পাদক শাকিল ও বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শামীম খান, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডাব্লিউএস) আশুলিয়ার সংগঠক মো. ইব্রাহিম ও টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের আহব্বায়ক মো.মিজান।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু জানান, গভীর রাতে জামগড়া এলাকা থেকে তাদের সংগঠনের ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের পরিচয় তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

শ্রমিক নেতাদের আটকের খবরে সাধারণ শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকেই গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে।”

বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবিতে সোমবার আশুলিয়ার ২৫টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরই মধ‌্যে বাণিজ‌্য মন্ত্রী, নৌমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও আন্দোলন অব‌্যাহত থাকে; মঙ্গলবার কাজ বন্ধ থাকে ৫৫ কারখানায়।     

বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিকনেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আন্দোলনে সমর্থন না দিলেও শ্রমিকরা নিজেরাই সংগঠিত হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

আর এ বিষয়টি ধরেই শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো একটা পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের ক্ষতি করতে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

শ্রমিকদের এই আন্দোলনকে ‘অবৈধ’ আখ‌্যায়িত করে তিনি বলেন, শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ৫৫ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, শ্রমিকরা যতদিন কাজে যোগ না দেবে ততদিনের বেতন তারা পাবে না।

বিজিএমইএ-এর ওই সিদ্ধান্ত বুধবার থেকেই কার্যকর করা হয়। বুধবার সকালে কারখানায় এসে নোটিস দেখে ফিরে যান বন্ধ কারখানাগুলোর অনেক কর্মী।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় আশুলিয়ায়। সেই সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাব পর্যন্ত পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও আর্মড পুলিশের টহল চলতে থাকে।

বৃহস্পতিবারও তা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে কারখানাগুলোর প্রধান ফটকে এবং শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়কে হাজার সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে।”