নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হামলা: ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ আব্দুস সালাম হলে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2016, 06:52 AM
Updated : 18 Dec 2016, 08:15 AM

প্রক্টর, প্রভোস্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শনিবার মধ্যরাতে সভার পর উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।   

পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য রোববার দুপুরে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় বসেছেন বলেও জানান উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের বিরোধে শনিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বহিরাগতরা এ হামলা চালায় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- আব্দুল হামিদ বাপ্পি (ফার্মাসি ৪র্থ ব্যাচ), নাসির আহম্মেদ রানা (ইংরেজি ৮ম ব্যাচ), সাইফুল হক রুপু (খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টি বিজ্ঞান ৮ম ব্যাচ), সাজ্জাদ শিহাব (ইংরেজি ৮ম ব্যাচ), জাহিদুর রহমান নাইম (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ১০ম ব্যাচ) ও নাসির হোসেন (অর্থনীতি ১০ম ব্যাচ)।

উপাচার্য বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আলোচনা করে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হবে।

‘বহিরাগত সন্ত্রাসীরা’ হলে ভাংচুর করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বহিরাগতদের নিয়ে এ ভাংচুর চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।

শনিবার মধ্যরাতের সভায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান, প্রক্টর মুশফিকুর রহমান, আব্দুস সালাম হল প্রভোস্ট ইউসুফ মিয়া ও সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরিয়ানির ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের আবদুল হামিদ রানা ও সাজ্জাদ প্রোমেল সমর্থকদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকাল থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করেও ওই দুইপক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শনিবার বিকালে ৪৫-৫০ জন বহিরাগত রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হলে প্রবেশ করে। একজনের হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। হামলাকারীরা হলে প্রবেশ করেই শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি পেটাতে ও কোপাতে থাকে। তারা চারতলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাসের প্রত্যেকটি কক্ষের দরজা, জানালার গ্লাস, চেয়ার-টেবিল ও ছাত্রদের মোবাইল, ল্যাপটপসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা ছাত্রদের নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ লুটও করে। এ সময় সাধারণ ছাত্ররা বাধা দিলে অনেককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে তারা।

এতে বিপ্লব, রিকি, সত্যজিৎ, রাকিব, সায়েমসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পরে সুধারাম থানা ও ডিবি পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হামিদ রানা তার নেতৃত্বে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সাজ্জাদ প্রোমেল ও রিয়েলের নেতৃত্বে বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছে।

অপরদিকে সাজ্জাদ প্রোমেল বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। হামলায় তার কয়েকজন সমর্থকসহ সাধারণ ছাত্ররা গুরুতর আহত হয়েছে।

ভাষা শহীদ আবদুস ছালাম ছাত্রাবাসের হলের প্রভোস্ট  ইউসুফ মিঞা বলেন, বিজয় দিবসে নাস্তার বিলি-বন্টন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার জের ধরে এ হামলা করেছে বহিরাগতরা। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থীও ছিল। তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক ক্ষতি করেছে। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।