যশোরের নাজিমকে সাড়ে ৬ মাস আগে ‘ধরে নেওয়া হয়’

চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা থেকে যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে র‌্যাব, তাদের একজনকে সাড়ে ছয় মাস আগে ঢাকা থেকে ধরে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

যশোর প্রতিনিধিও চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2016, 02:08 PM
Updated : 9 Dec 2016, 02:12 PM

বৃহস্পতিবার টেলিভেশনে দেখে পরিবারের সদস্যরা এবং সাংবাদিকদের কাছে ছবি দেখে এলাকাবাসী নাজিম উদ্দিনকে (৪২) শনাক্ত করেন বলে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার জানান।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার হাসান আলী গাজীর বড় ছেলে নাজিম।

শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরের বাসভবনে গিয়ে আটক পাঁচ ‘হুজি’ সদস্যের ছবি দেখালে নাজিমউদ্দিনের ছোটভাই আজিমউদ্দিন, স্ত্রী নাজমা আক্তার ও দুই মেয়ে তাকে শনাক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কর্নেল হাট এলাকায় একটি বাড়ি ঘিরে কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে আটকের খবর জানায় র‌্যাব।

আটক ব‌্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সদস‌্য বলে দাবি র‌্যাবের।

নাজিমের স্ত্রী নাজমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি বছরের ১৮ মে ঢাকার বসুন্ধরার একটি বাসায় (নম্বর ৫২, রোড নম্বর ১৪, ব্লক এফ) বন্ধু খন্দকার মাহফুজ আলমের কাছে বেড়াতে যান নাজিম। মাহফুজ যশোরের ঝুমঝুমপুর এলাকার মৃত খন্দকার জায়েদ আলীর ছেলে।

নাজমা বলেন, বন্ধুর বাসায় থাকা অবস্থায় ২৫ মে ব্যবসায়িক অংশীদার গাউসুল আজমের ফোন পেয়ে সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন নাজিম। গাউসুলের ঢাকার মিরপুরে অফিস করার কথা ছিল এবং সেখানে নাজিমকে কম্পিউটারের কাজ করার কথা বলে দোকান দেখাতে তাকে ফোন করে মিরপুরে ডেকে নেন গাউসুল।

ওইদিন (২৫ মে) বেলা ১১টার দিকে মিরপুর গাউসুলের সামনে থেকে সাদা পোশাকে আসা ডিবি পরিচয়ে চার জন লোক মাইক্রোবাসে তুলে নাজিমকে নিয়ে যায়, বলেন নাজমা।  

এরপর ঢাকায় গিয়ে সম্ভাব্য সবখানে খোঁজ করেও কোনো সন্ধান পেয়ে ২৮ মে ঢাকার পল্লবী ও ভাটারা থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু মামলা না নিয়ে ভাটারা থানা পুলিশ একটি নিখোঁজ ডায়েরি (১৭৩০) গ্রহণ করে বলে জানান নাজমা।

তারও পরে ১ জুন প্রেসক্লাব যশোরে এবং ১৬ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নাজমা আক্তার।

এছাড়া ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে স্বামীর ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আসেন বলেও তিনি জানান।

নাজমা আরও জানান, জঙ্গি ইস্যুতে সরকারের তৎপরতার অংশ হিসেবে ঈদুল ফিতরের চার দিন পর মণিরামপুর থানা পুলিশ নাজিমের বাড়ি যায়। ওই সময় তিনি তিন দফা থানায় গিয়ে পুলিশকে সম্ভাব্য সব তথ্য দিয়েছেন।  

ধরে নেওয়ার ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি একান্ত পরিবারের বক্তব্য। আমরা আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য কালই দিয়েছি। নাশকতার জন্য তাদের গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া তাদের কাছে সবকিছু পাওয়া গেছে।”

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ৫/৬ জনকে পাওয়া যাচ্ছে না খবর এসেছে। তাদের স্বজনরাও তো বলবে যে তারা জিডি করেছিল। এরা আসলে পরিবারকে কিছু না বলেই চলে যায়।

মণিরামপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রহমান ছবি দেখে নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করেন।

তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলছেন মণিরামপুর থানার ওসি বিপ্লবকুমার নাথ।

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, “আমি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে খোঁজ নিয়ে জেনেছি চট্টগ্রামে আটক নাজিমই যশোরের মণিরামপুরের নাজিমউদ্দিন।”

যশোরের পাঁচ ব্যক্তি জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত বলে কিছুদিন আগে পুলিশ তথ্য প্রকাশ করে। যশোর পুলিশ প্রশাসনের ছাপানো পোস্টারে জঙ্গি হিসেবে নাজিমের নাম ও ছবি ছাপা হয়েছে পাঁচ নম্বরে।

নাজিমের পরিচয়

মণিরামপুর শহরের দুর্গাপুর এলাকার মৃত হাসান আলী গাজীর বড় ছেলে নাজিম। তার ছোটভাই আজিম ইজিবাইক চালক।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মণিরামপুর সম্মিলনী স্কুল থেকে এসএসসি ও ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর স্থানীয় একটি দুধের কোম্পানিতে চাকরি করতেন নাজিম। এরপর ১৯৯৭ সালে উপজেলার জালঝাড়া গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে মণিরামপুর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন।

স্ত্রী নাজমা জানান, বিয়ের পর এক বছর পর্যন্ত তাবলীগ জামায়াত করতেন নাজিম। এরপর মণিরামপুর শহরের ‘নকশা কম্পিউটার’ নামে একটি দোকান দেন। ২০১২ সালের দিকে ওই দোকান বিক্রি করে মালয়েশিয়া যান। দুই বছর পর গত বছরের ২৭ রমজান দেশে ফেরেন।

তারপর ঢাকায় থেকে ব্যবসার অংশীদার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার লুচিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ গাউসুল আজমের (৪০) সঙ্গে সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠাতেন।