ইদ্রিস আলীর মৃত্যুদণ্ডে শরীয়তপুরে আনন্দ মিছিল

একাত্তরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে রাজাকার মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদারকে মৃত‌্যুদণ্ড দেওয়ায় শরীয়তপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2016, 12:00 PM
Updated : 5 Dec 2016, 12:00 PM

বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করে।

রায় ঘোষণার পরপরই শরীয়তপুর শহরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের সামনে অপেক্ষমান মুক্তিযোদ্ধারা উল্লাস প্রকাশ করে অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

এরপর শরীয়তপুর চৌরঙ্গী এলাকা থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ঋষি পাড়া এসে শেষ হয়।

মিছিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ সীমন, মুক্তিযোদ্ধা, শিকদার ইদ্রিস আহম্মেদ, মো. খলিলুর রহমান, শওকত আলী মাদবর, মুনসুর আলী মোল্লা, সেকান্দার ঢালী, আ. আজিজ শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান খান (দুলু), আব্দুস সামাদ তালুকদার, আ. জলিল হাওলাদার আবুল হোসেন খান, আ. ছাত্তার বেপারী, শেখ গিয়াস উদ্দিন,আবুল কাসেম ফকির, সংবাদিক কে এম রায়হান কবীর, যুবলীগ নেতা হোসেন সরদার,বিল্লাল হোসেন দীপু উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছামাদ তালুকতার বাদী হয়ে ২০১০ সালে ২৬ মে শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আটজনকে আসামি করে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে মামালাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মামলার করা আগেই ছয়জন মারা যায়। আরেক আসামি সোলাইমান মোল্ল্যা ওরফে সোলেমান মৌলভী দেড় বছর কারা ভোগের পর অসুস্থ হয়ে সম্প্রতি কারাগারে মারা যান।

গত বছরের ১৪ জুন সোলায়মান ও ইদ্রিসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই রাতে গোয়েন্দা পুলিশ সোলায়মান মোল্ল্যাকে গ্রেপ্তার করলেও ইদ্রিস পলাতক রয়েছেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধেরর সময় শরীয়তপুরের মনোহর বাজার, উত্তর ও দক্ষিণ মধ্যপাড়া, কাশাভোগ, পূর্ব পশ্চিম রুদ্রকর, ধানুকায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল ইদ্রিস রাজাকারের বিরুদ্ধে।

মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ তালুকদার বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শরীয়তপুরের মনোহর বাজার, উত্তর মধ্যপাড়া, দক্ষিণ মধ্যপাড়া, কাশাভোগ, রুদ্রকর ও ধানুকা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ করে রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদার।

অতি দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে ফাসির রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান খান (দুলু) বলেন, “কুখ্যাত রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।”

অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামি ইদ্রিস আলীর ফাঁসির রায়ে আমি খুশি ও আনন্দিত। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অতি দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।”

এ মামলার ভিকটিম সাক্ষ্য দেওয়া নারীদের জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করে বীরঙ্গনা হিসেবে অবিলম্বে গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।