সিরাজগঞ্জের কলেজে আওয়ামী লীগের তালা

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ‘কথা মত’ অধ্যক্ষ নিয়োগ না দেওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে সিরাজগঞ্জের একটি কলেজ।

ইসরাইল হোসেন বাবু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2016, 05:15 AM
Updated : 4 Dec 2016, 05:32 AM

সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়িপাড়া কলেজে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষাও এ পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়ে আছে।

কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জহুরুল ইসলাম জানান, ১৯৯৯ সালে ১১৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কলেজটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি।

তিনি বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে ‘দ্বন্দ্বের জের ধরে’ রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খোকন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বকুল গত ২১ নভেম্বর সকালে লোকজন নিয়ে এসে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।

“এরপর গত ২৬ নভেম্বর টেস্ট পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের থেকে বের করে দিয়ে সব কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।”

কলেজ খুলতে না পারায় টেস্টের সাতটি পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল করিম বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ করার পাঁয়তারা করছে। ম্যানেজিং কমিটি ও কলেজের স্টাফরা বিষয়টির বিরোধিতা করায় তারা কলেজে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।”

এ অবস্থায় ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী আর ৩৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ‌্যে পড়েছেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খোকন কলেজ বন্ধের বিষয়ে দায় চাপিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির ওপর।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ওই কলেজের আমার কোনো পদ-পদবী নেই। যা কিছু হয়েছে, সবই উনার নেতৃত্বে হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলেও তাকে জিজ্ঞাসা করেন।”

তালা দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন আব্দুল মুক্তাদির বকুল। তার যুক্তি, কলেজটি এমপিওভুক্তির তালিকায় রয়েছে; এ অবস্থায় অধ্যক্ষ নিয়োগ জরুরি।

“পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও কলেজের শিক্ষক ও স্টাফদের যোগসাজশে ম্যানেজিং কমিটির একাংশ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়নি।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। সে কারণে কলেজে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

অধ্যক্ষ নিয়োগের উদ‌্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের পরিচালনা পর্যদের সভাপতি আজহার আলী বলেন, “আমরা কলেজ এমপিওভুক্ত করার পর অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে চাইছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বার বার চাপ সৃষ্টি করছেন।”

জটিলতা শুরুর পর প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহর ভাষ‌্য, তিনি কলেজে তালার বিষয়টি জানতে পেরেছেন শনিবার।

“সাংবাদিকদের কাছেই আমি বিষয়টি জেনেছি। এর আগে কেউ জানায়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দপ্তরে এসে দেখা করতে বলা হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।”