ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ আজবাহার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ আসামিদের ধরতে কাজ করছে। আগেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
মামলার প্রধান আসামি মো. কামাল কালিগঞ্জ উপজেলার কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।
পুলিশ বলছে, কামালের ভাই আজাদ ও লিখন নামে দুই আসামিকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কামালসহ বাকি ১৪ জন পলাতক।
গত ১৬ অক্টোবর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামের বর্গাচাষি শাহানূর বিশ্বাসকে লোহার শাবল, হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে মেরে গুরুতর আহত করা হয়। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন শাহানূরের দুটি পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শাহানূর। এ কারণে সাবেক ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমানের লোকজন তার এই হাল করেছে।
ওই ঘটনায় শাহানূরের আত্মীয় মো. ইয়াকুব আলী সাতজনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ করেন। শাহানূরের ছোট ভাই সামাউল ইসলাম ১৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আসামিদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয়।
এই আদেশ বাস্তবায়ন করা হল কি না- তা প্রতিবেদন আকারে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে আতদালতে জানাতে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে বিচারক বলেন, “অ্যারেস্ট করবেন না... ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা... নো।”
অবশ্য স্থানীয় পুলিশের ভাষ্য, গ্রাম্য বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরের শিকার হয়েছেন শাহানূর।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, নলভাঙ্গা গ্রামে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এক পক্ষের নের্তৃত্বে আছেন কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান; আরেক পক্ষের নেতা সাবেক সদস্য মশিউর রহমান।
বর্তমান সদস্য কামাল সাবেক সদস্য মাহাবুরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আর শাহানূর সাবেক সদস্য মশিউর রহমানের সমর্থক বলে স্থানীয়দের তথ্য।
আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় ওই দুই পক্ষের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে এবং দুই পক্ষের ১৮টি মামলা আদালতে বিচারাধীন বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ আজবাহার আলী জানান।
গত নির্বাচনে সদস্য পদে কামালের কাছে পরাজিত হওয়া পীর আলি বলেন, “বিরোধের জেরেই কামাল ও তার লোকজন শাহানূরকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়। পরে তার পা কেটে ফেলতে হয়।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের (কালীগঞ্জ উপজেলা) সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, “কামাল মেম্বর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এর আগেও ওই গ্রামে গিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসা করে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও জটিলতা মেটেনি।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, “মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কোনো ঘটনা নয়। গ্রাম্য শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন তার উপর হামলা করে পা ভেঙে দিয়েছে।”
শাহানূরে বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একটি হত্যা ও চারটি মারামারির মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে শাহানূরের বড় মেয়ে যশোর সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী শারমিন আক্তার বলছেন, তার বাবাকে মারধর করা হয়েছে প্রতিবাদ করার কারণেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তার ছোট বোন স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল-কলেজে যাতায়াতের পথে তাদের দুজনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন ‘প্রভাবশালী’ মাহাবুব মেম্বরের ছেলে আজম ও তার সহযোগীরা।
“বাবা বিষয়টি গ্রামের কয়েকজনকে জানালে ক্ষিপ্ত হয় প্রভাবশালী ওই পরিবারের সদস্যরা বাবাকে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়।”
শারমিন বলেন, এরই মধ্যে তার বাবার চারবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এখন তারা সবাই বাড়িছাড়া। আর তার বাবা পা হারিয়ে এখন ভিটে-মাটি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।