ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় কোন্দলে সাংসদের সভামঞ্চ ভাংচুর

ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধের জেরে স্থানীয় সাংসদ দবিরুল ইসলামের জন্য তৈরি সভামঞ্চ ভাংচুর করেছে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2016, 09:38 AM
Updated : 21 Nov 2016, 09:44 AM

হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস জানান, রোববার রাতে ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব‌্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর দবিরুল ইসলাম ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পুরনো কমিটির ১৩ জনকে বাদ দিয়ে সহ সভাপতি সামসুল আলমকে সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি করে দেন।

এ নিয়ে দ্বন্দ্বে বেশ কিছুদিন ধরেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

সাংসদের করে দেওয়া ইউনিয়ন কমিটি সোমবার বিকালে নিজেদের কার্যালয়ের সামনে জনসভার আয়োজন করে, যেখানে দবিরুল ইসলামের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকে প্রচারও চালানো হয়।

কিন্তু জনসভার আগের রাতে ওইা জনসভার জন‌্য করা মঞ্চে ভাংচুর চালানো হয়। এ সময় সাংসদ দবিরুলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় বলেও স্থানীয়রা জানান।

সাংসদের করে দেওয়া কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসন বলেন, “সোমবার বিকালে একটি জনসভার আয়োজন করেছিলাম আমরা। জনসভা যেন সফল না হতে পারে- সেজন‌্য পুরনো কমিটির অব‌্যাহতি পাওয়া ১৩ জনসহ ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে সভামঞ্চ ভাংচুর করে।”

সোহরাবের দাবি, ইউপি নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পুরনো কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনসহ ১৩ জনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কমিটি করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা না করে বিতর্কিত নেতৃত্বের মাধ্যমে জনসভা আয়োজন করা হয়। এতে নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেছে।”

ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পুরনো কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম নিজের স্বার্থে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত।”

হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, “সাংসদ কমিটি করে দেওয়ার পর দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় ওই পকেট কমিটির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হলে আগের কমিটিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে বলা হয়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ দবিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীকে সমর্থন ও ভোট দেয়। সে কারণে তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহিত দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়।”

হরিপুর উপজেলার ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি’ এবং ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা রোববার রাতে জনসভা মঞ্চ ভাংচুর করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ ঘটনায় জেলা কমিটি আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস জানান, ভাংচুরের পর জনসভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।