পাথর আমদানি হ্রাস, কমেছে রাজস্ব আয়

‘দাম বাড়ার’ কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি হ্রাস পাওয়ায় রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2016, 11:02 AM
Updated : 15 Nov 2016, 11:02 AM

সেপ্টেম্বরের পর এক মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে বাংলাবান্ধা শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এ কারণে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার পাশাপাশি কয়েক হাজার লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

বাংলাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার ফরিদ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার টন পাথর আমদানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

“আর অক্টোবর মাসে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট রাজস্ব এসেছে ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এ মাসে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পাথর আমদানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।”

ফরিদ বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পাথর থেকেই মূলত বন্দরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে ৫/৬ দিন ছাড়া অবশিষ্ট দিনগুলোতে পাথর আমদানি হয়নি। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

হঠাৎ করে পাথরের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাথর আমদানিকারক এমএইচ বাবুল খাঁনসহ একাধিক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে স্থানীয়ভাবে ‘সাপ্লায়ার’ নামে প্রভাবশালী একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এমন কোনো চক্র বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় অন্য কোনো স্থলবন্দরে নেই।

বাবুল খাঁন বলেন, এ চক্রটি প্রতি টন পাথরের দাম ৯ ডলারের স্থলে ১৩/১৪ ডলার বা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়েও বেশি দাবি করছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে এলসি খুললেও পাথর আমদানি বন্ধ করে রেখেছেন।

তবে বুড়িমারি ও হিলিসহ অন্য স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ব্যবসায়ীরা ৯ ডলারেই পাথর আমদানি করছেন বলে তিনি দাবি করেন।

পঞ্চগড় আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেবলেন, অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে মূল্য না কমানো পর্যন্ত পাথর আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, সমস্যা নিরসনে ভারতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে।

“তারা সেখানকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে শিগগিরই একটি সমাধানে আসতে পারবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

বাংলাবান্ধা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসখানেকের বেশি সময় ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় তারা প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। একই সঙ্গে পাথর পরিবহন ও পাথর ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ হাজার লোক প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে নেপালে এ বন্দর দিয়ে সীমিতভাবে প্লাস্টিক ফার্নিচার, ব্যাটারি, কোমল পানীয় প্রভৃতি রপ্তানি হয়। তবে ভারতে কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না। আর ভারত থেকে শুধু পাথর এবং নেপাল থেকে মসুর ডালসহ কিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত এ বন্দরের বিপরীতে রয়েছে ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দর। এ দুই বন্দরের মধ্য দিয়ে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে ও ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়।