নাসিরনগরে হামলা: ৩ আ. লীগ নেতা বহিষ্কার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মবলম্বীদের বাড়িঘর ও উপাসনালয় পাঁচ দিনের ব‌্যবধানে দুই দফা আক্রান্ত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় তিন নেতাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2016, 04:38 PM
Updated : 5 Nov 2016, 05:18 AM

হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন সংবাদমাধ‌্যমের খবরে ওই তিনজনের নাম এসেছে। এ কারণে আমরা তাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছি। তদন্তে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।”

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন সভাপতি ফারুক মিয়া ও চাপরতলা ইউনিয়ন সভাপতি সুরুজ আলী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে এই তিনজনই মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে গত মার্চে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর আসনের সাংসদ র আ ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের সঙ্গে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। নাসিরনগরের এমপি দলের জেলা কমিটিতে আছেন উপদেষ্টা হিসেবে।

সে সময় হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়াকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলে জেলা কমিটি তাতে আপত্তি তোলে।

জেলা কমিটির নেতাদের বক্তব‌্য ছিল, ফারুকের বাবা তাজুল ইসলাম ওরফে তাইজুদ্দিন একাত্তরে একজন রাজাকার হিসেবে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিলেন। আর মন্ত্রী ছায়েদুল হক একক সিদ্ধান্তে একজন ‘রাজাকারপুত্রকে’ দলের মনোনয়ন দিচ্ছেন।

এ নিয়ে সে সময় মিছিল-সমাবেশও হয়। বিতর্ক তৈরি হওয়ায় পরে হরিপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি। নির্বাচনে জিতে তিনিই এখন হরিপুরের চেয়ারম‌্যান।

ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

আবুল হাসেম ও ফারুক মিয়া

নাসিরনগরের ইউএনও মোয়াজ্জেম ও ওসি আবদুল কাদেরের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের পর ওই হামলা হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।

ওই ঘটনার পর সহস্রাধিক লোককে আসামি করে দুটি মামলা হয়; গঠন করা হয় তিনটি তদন্ত কমিটি। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয় এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা নাসিরনগরে আসেন ‘তদন্ত’ করতে।

কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই শুক্রবার ভোরে নাসিরনগর উপজেলা শহরের মধ্যপাড়া ও দক্ষিণপাড়ায় হিন্দুদের কয়েকটি বাড়ি ও মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়।

বার বার হামলার ঘটনায় সারা দেশের মত রাজধানী ঢাকাতেও শুক্রবার বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানবন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, “ঘটনা ঘটার কয়েক দিন পরে মন্ত্রী ছায়েদুল হক এলাকায় গিয়েছেন। তিনি যাওয়ার পরেও সেখানে আবার হামলা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।”

এই ঘটনায় তিনি মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করলে উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সমস্বরে তার প্রতি সমর্থন জানান।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদের বুধবার প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হলেও মন্ত্রী ছায়েদুল হক ওই আদেশ বদলানোর চেষ্টা করেন বলে গণমাধ‌্যমে খবর এসেছে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে থানায় দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এলাকা ছড়্নে আবদুল কাদের।

একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সরকার ‘নির্বিকার নেই’জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে, যারা এ অপরাধ সংঘটিত করেছে, শাস্তি তাদের পেতেই হবে।