‘টাকার অভাবে ব্যাট কিনতে পারেননি মিরাজ’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিনে পাঁচ উইকেট নিয়ে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের অতীত।

খুলনা প্রতিনিধিসুবীর রায়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 06:00 PM
Updated : 22 Oct 2016, 08:26 PM

মিরাজের বাবা জালাল হোসেন রেন্ট-এ কারের মাইক্রোবাস চালক। খুলনার খালিশপুরে ভাড়ায় টিনের ঘরে স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। দুই ছেলে-মেয়েই লেখাপড়া করেন।

মিরাজ আট বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন বলে জানান জালাল। এতদিনে ছেলে বিভিন্ন পুরস্কার জিতলেও ক্রিকেটটা তেমন বোঝা হয়নি।

“তবে লোকজনের কাছ থেকে শুনে যতটুকু বুঝেছি তাতে জেনেছি মিরাজ খুব ভালো খেলেছে। সে আরও ভালো করবে আশা করি,” শুক্রবার কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন তিনি।

বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন মিরাজ।

নিজের ঘরে মিরাজের বাবা জালাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্যাপ পেয়ে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলতে নামেন তিনি। প্রথম দিনেই স্পিন বলে ইংল্যান্ডের পাঁচ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন মিরাজ। পরদিন আরও এক উইকেট নিয়ে টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট হয় তার।

এরপর থেকে সবার মুখে ছেলের প্রশংসায় আনন্দিত জালাল বলেন, “আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। আজ ছেলের জন্য আমি যে সম্মান পাচ্ছি তা ভাষায় বলার নয়।”

ছেলের কীর্তিতে বাসায় উপস্থিত হওয়া সাংবাদিকদের জালাল হোসেন বলেন, দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও মিরাজ নিজের সাধনা থেকে সরে আসেননি।

মিরাজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জন্য তার প্রশিক্ষক খালিশপুরের কাশিপুর ক্রিকেট একাডেমির কোচ মো. আল মাহমুদের অবদান স্মরণ করেন তিনি।

জালাল বলেন, এক সময় টাকার অভাবে ব্যাট, প্যাড ও গ্লাভস কিনতে না পারায় মিরাজের খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন কোচ আল মাহমুদ নিজের টাকায় এসব কিনে দেন এবং তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘আজকের মিরাজ’ তৈরি করেছেন।

মিরাজকে টেস্ট ক্যাপ পরানো হয় বৃহস্পতিবার, এদিনই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন সবশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক।

মিরাজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও ভালো করবেন বলে আশা করছেন তার প্রশিক্ষক আল মাহমুদ।

খালিশপুর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংসদের ক্রিকেট একাডেমির টিম ম্যানেজার শেখ মনির হোসেন বলেন, মেহেদী হাসান মিরাজের ক্রিকেটে হাতেখড়ি তাদের একাডেমিতে। সেখানে তাদের প্রশিক্ষক ছিলেন নিয়াজ মোর্শেদ পল্টু।

খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান বলেন, মিরাজ একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার।

“ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার এই সাফল্যে আমরা দারুন খুশি।”

ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা মিনারা বেগমও।

ঘরের ভিতর শোভা পাচ্ছে মিরাজের পাওয়া বিভিন্ন পদক।

তিনি বলেন, ছেলে ক্রিকেট খেলে এত সুনাম করবে এটা তিনি কল্পনাও করেননি। যেভাবে মানুষ বাড়িতে আসছে তাতি তিনি বিস্মিত।

মিরাজদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে। তার দাদা খুলনার পিপলস জুট মিলের শ্রমিক ছিলেন। সে কারণে ১৯৮৫ সালে মিরাজের বাবা খুলনায় চলে আসেন। সেই থেকে সন্তানদের নিয়ে খালিশপুরে বসবাস করছেন তিনি।

খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কের নর্থ জোনের ৭ নম্বর প্লটে বৃহত্তর বরিশাল কল্যাণ সমিতির অফিসের পিছনে টিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। তার একমাত্র বোন খুলনার একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন। আর এ বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন মিরাজ।