ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ হকের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় সেই খবর কুড়িগ্রামে পৌঁছানোর পর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গণের কর্মীরা ছুটে যান তাদের থানাপাড়ার বাড়িতে।
কুড়িগ্রামে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, “তিনি আমাদের কুড়িগ্রামের সন্তান। তার মৃত্যুতে আমাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হল।”
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক সব্যসাচী বলেন, সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। তার লেখনীতে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের কথা এসেছে বিষেশভাবে।
কুড়িগ্রাম রিভারভিউ স্কুলে সৈয়দ হককে তিন ক্লাসের ‘সিনিয়র’ হিসেবে পেয়েছিলেন কুড়িগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি একেএম সামিউল হক নান্টু।
“আমি ছিলাম ষষ্ঠ শ্রেণিতে, উনি নবম শ্রেণিতে। খুব দূরন্ত ছিলেন সৈয়দ হক। তার বাবার ছিল হোমিওপ্যাথির দোকান। শহরের জাহাজমোড়ে তার মায়ের নামে ছিল নূরজাহান মেডিকেল হল।”
সামিউল হক জানান, মেট্রিক পাস করার পর বাড়ি পালিয়ে সৈয়দ হক বোম্বে (আজকের মুম্বাই) চলে গিয়েছিলেন সিনেমায় কাজ করবেন বলে। কিন্তু বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন।
শেষ পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ফিরেছিলেন সৈয়দ হক, তবে ডাক্তার হওয়া হয়নি; সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্পে বিচরণের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন ‘সব্যসাচী লেখক’।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম। ওই বাড়িতে এখন তার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আজিজুল হক পরিবার নিয়ে থাকেন।
সন্ধ্যা থেকেই ওই বাড়িতে মানুষের ঢল। সবাই জানতে চাইছেন, কখন আনা হবে লেখকের মরদেহ, কখন সারা হবে আনুষ্ঠানিকতা।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী জানান, গত বছর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সৈয়দ হক এই মাটিতেই শায়িত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অনুমতি দেয়।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, কলেজ মাঠের পাশে ধান ক্ষেতসংলগ্ন যে জমিতে সৈয়দ হক মাটি পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন, সেখানে তিন শতক জমিতে মাটি ভরাট করে কবরের ব্যবস্থা হচ্ছে। পৌর মেয়র আব্দুল জলিল বিষয়টি তদারকি করছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবিহা খাতুনসহ অন্যদের নিয়ে সন্ধ্যায় কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে বৈঠকও হয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত করা হয়েছে বরেণ্য এই সহত্যিককে শেষ বিদায়ের পরিকল্পনা।
প্রিয় জায়গায় কবরের সম্মতি মেলায় গত ১১ মার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং কুড়িগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন সৈয়দ হক।
সেখানে তিনি লেখেন, “আমার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে আপনারা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, এতে আমি আনন্দিত এবং আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার জন্মস্থান আমার শেষ ঘর হবে। এটা যে আমার বহু দিনের ইচ্ছা, আমার পরিবার পরিজনও সেভাবে প্রস্তুত। তারাও আপনাদের সিদ্ধান্তে আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। আমার সশ্রদ্ধ সালাম রইল।”