রাবিতে ডিজিটাল উপস্থিতি: বাধা শিক্ষকদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হতে যাওয়া ‘ডিজিটাল উপস্থিতির’ বিরোধিতায় নেমেছেন শিক্ষকদের একাংশ, যারা প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ হিসেবে পরিচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিইব্রাহীম খলিল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 03:27 PM
Updated : 27 Sept 2016, 03:27 PM

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ এন্তাজুল হক স্বাক্ষরিত নির্দেশনা গত ৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

৪৬৭তম সিন্ডিকেটে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আগামী শনিবার থেকে চালু হবে। এ ব্যবস্থায় প্রতিটি বিভাগ ও দপ্তরে ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্ট মনিটরিং ডিভাইস বসানো হয়েছে। প্রতিদিন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ডিভাইসে নিজেদের স্মার্ট কার্ড স্পর্শ করিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন।

এ ব্যবস্থাটি চালু হলে শিক্ষকদের স্বায়ত্তশাসনে বিবেকের উপর যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সেটি খর্ব হবে বলে মনে করেন এ ব্যবস্থার বিরোধিতাকারীরা।  

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ডিজিটাল ক্যাম্পাস চালুর লক্ষ্যে বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনলাইন ভর্তি, অটোমেশন পদ্ধতিতে ফি পরিশোধ, ওয়াইফাই ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়েছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে হল পরিচালনাসহ বেশ কিছু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

“স্বায়ত্তশাসনের স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতার বিষয়টি আছে। দায়িত্বে স্বচ্ছতা রাখতে ডিজিটাল উপস্থিতি চালু করা হচ্ছে।”

এ ব্যবস্থা চালু না করার অনুরোধ জানাতে মঙ্গলবার সকালে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক রকীব আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

রকীব আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে ‘ডিজিটাল উপস্থিতি’ প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে।

তারা ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ পরিপন্থি বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করেন এবং শিক্ষকদের অ্যাটেনডেন্স চালু করার উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান, বলেন অধ্যাপক রকীব।

এদিকে সোমবার রাতে একই ইস্যুতে সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ্ ও সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎ শেষে শাহ্ আজম বলেন, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী শিক্ষকদের অ্যাকাডেমিক ফ্রিডমের (স্বাধীনতা) প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাদানের কোনও টাইম মেইন্টেইন নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা, কখোনও মধ্য রাতেও শিক্ষকরা যুক্ত থাকবেন গবেষণার সঙ্গে, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে, নতুন জ্ঞান সৃজন করবেন এবং বিতরণ করবেন।

“সেই সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে শিক্ষকদের ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সের মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত সেই সংস্কৃতির ও শিক্ষকদের মর্যাদার প্রতি আঘাত। সেক্ষেত্রে আমরা উপচার্যকে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে এবং প্রত্যাহার করতে বলেছি।”

রেজিস্ট্রারের নির্দেশনা প্রত্যাহার না হলে আগামী শনিবার সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে তিনি জানান।

সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, যেকোনো প্রযুক্তি প্রথমে চালু হলে সবাই এটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ ও শঙ্কায় থাকেন। বিষয়টি বুঝতে পারলে ধীরে ধীরে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যায়। সরকার দেশের সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবার মান, দক্ষতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবার মান বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিয়ে আসার জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ডিজিটাল ডিভাইসে হাজিরা নেওয়ার পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।