‘স্যারেরা বলেছিল ঈদের পরে মজুরি দেবে’

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পে কর্মরত যশোরের শার্শা উপজেলার ১৩৬ নারীশ্রমিক দুই মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 05:23 AM
Updated : 27 Sept 2016, 05:42 AM

রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করার পরও কর্মকর্তারা ইচ্ছামাফিক অনুপস্থিত দেখিয়ে মজুরি কেটে নেন বলে অভিযোগও করেছেন ওই নারীরা।

প্রকল্পে কাজ করেন শার্শা গ্রামের উর্মী খাতুন। তিনি বলেন, “বছরে ৩৬৫ দিন কাজ করলিও নায্য মজুরি পাইনে। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যি তো কাজ করা যায় না। এ সময় বসে থাকলি বা আসতি দেরি হলি স্যারেরা অনুপস্থিত দেখিয়ে বেতন কেটে নেয়।

“সামান্য বেতন, যার অর্ধেক চলে যায় গাড়ি ভাড়া আর হাত খরচে। তার পরও বেতন যদি ঠিকমতো না পাই তাহলে আমরা বাঁচব কী করে?”

নারায়ণপুর গ্রামের নাজমা বেগম বলেন, তার স্বামী দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে চার বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। দুই শিশুসন্তান নিয়ে জীবনযাপনের অন্য কোনো উপায় না পেয়ে এ কাজে আসেন তিনি।

“কম মজুরি হলেও ক্ষুধা মেটাতে এ কাজে আইছি। ভোরে কাজে আসার সময় বাচ্চাদের পাশের বাড়ি রেখে আসি। বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ওদের নিয়ে চিন্তা হয়। কিন্তু করার তো কিছু নেই। দুই মাস বেতন পাইনি। তাই ঈদে ছেলে-মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করতি পারিনি।

“স্যারেরা বলেছিল ঈদের পরে মজুরি দেবে, কিন্তু এখনও পাইনি।”

বেড়ি নারায়ণপুরের নমিতা দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্বামী ফেলে চলে যাওয়ায় আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। প্রত্যেক দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এতে দিনে বেতন ১৫০ টাকা।

“বেতনের ৯০ টাকা হিসেবে প্রতি মাসে আমরা পাই। বাকি ৬০ টাকা স্যারেরা কেটে রাখে। কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তখন ওই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা পাব। এখন জিনিসপত্রের যে দাম তাতে ওই টাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। মাসের বেতন মাসে পেলে উপকার হতো।”

আলেয়া খাতুন বলেন, “শুনিছি যারা সরকারি কাজ করে তারা সপ্তায় দুই দিন ছুটি পায়। ঈদ ও পুজোর ছুটি পায়, কিন্তু আমাদের বছরে একদিনও ছুটি নেই। এতে আমরা ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো স্কুলি পাঠাতে পারিনে, সংসারের দিকিও খেয়াল করতি পারিনে।

“সরকার যদি আমাদের মাসে দুই-একদিন করে ছুটি দিতো, তাহলি অনেক উপকার হতো।”

এসব অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক ইউনুস আলী জোয়ার্দার বলেন, প্রতিমাসে সময়মতোই জেলা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেতন চেয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পের কমিউনিটি অর্গানাইজার আব্দুল হালিম বলেন, “এলসিএস ও স্লিপ প্রকল্পে কাজ করেন এমন নারীদের সরকারি কোনো ছুটি বরাদ্দ নেই। তাই সব দিন কাজ করতে হয়। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলে কর্মীরা সময়মতো কাজে না এসে ফাঁকি দেয়। এতে মাসে গড়ে একদিন অনুপস্থিত দেখিয়ে বেতন কাটা হয়। এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২০১৩ সালে পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণা-বেক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয় বলে জানান আব্দুল হালিম।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে চলছে এ কাজ। কম মজুরি হলেও অভাবের তাড়নায় গ্রামের নারীরা এসব কাজ করে থাকে।

শার্শা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ১৩৬ নারী দুই-তিন বছরের চুক্তিতে এ কাজ করছে বলে তিনি জানান।