দেশের বিভিন্ন স্থানে আগাম ঈদ

প্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, পটুয়াখালী, শেরপুর, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজারসহ দেশের কয়েকটি এলাকার মানুষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2016, 06:00 AM
Updated : 12 Sept 2016, 06:01 AM

এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে।

সোমবার ঈদুল আজহার জামাতের পর তারা পশু কোরবানিও করেন।

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ

মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে সোমবার ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রাসহ ৪০টি গ্রামের বাসিন্দারা।

প্রায় এক শতাব্দি ধরে ওইসব গ্রামের মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করে আসছেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় সাদ্রা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে ঈদ জামাতের ইমামতি করেন আরিফ উল্যাহ। জামাতে পাঁচ শতাধিক মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন।

আরিফ উল্যাহ জানান, ১৯৩২ সালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের তৎকালীন পীর ইসহাক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সাদ্রা এলাকায় রোজা পালনসহ দুই ঈদ উদযাপনের নিয়ম চালু করেন।

মধ্যপ্রাচ্য তথা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দীর্ঘ সময় ধরে এসব গ্রামের লোকজন রোজা, দুটি ঈদ, শবে বরাত, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন বলে জানান তিনি।

হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, বেলঁচো, জাঁকনি, প্রতাপপুর, গোবিন্দপুর, দক্ষিণ বলাখাল, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেনাগাঁও, বাসারা উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, পাইকপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, শাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, চরদুখিয়া। মতলব দক্ষিণ উপজেলার দশআনী, মোহনপুর, পাঁচআনী ও কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রামে ঈদ উদযাপিত।

মুন্সীগঞ্জের ৯ গ্রামে ঈদ

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয় গ্রামে সোমবার ঈদুল-আজহা উদযাপিত হচ্ছে।

গ্রামগুলোর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবারও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করছে। গ্রামগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দির ও কংসপুরা একাংশ।

গত বছরগুলোর মত এবারও শিলই গ্রামে এই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জামাতে ইমামতি করেন ডা. মনিরুল ইসলাম।

 তিনি বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা দিলে সেই অনুযায়ী ঈদ পালন করা উচিত। তাই আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছি।”

লক্ষ্মীপুরে ১১ গ্রামে ঈদ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জে ১১টি গ্রামেও আগাম ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে।

মগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শারশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা গ্রামসহ ১১টি গ্রামের বাসিন্দারা ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।

সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও বাজারের তালিমুন কোরান নুরানী মাদ্রাসা মাঠে ঈদের  জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা নেছার আহমদ।

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে এসব গ্রামের মুসল্লীরা গত ৩৬ বছর যাবত সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছে।

শেরপুরে ৫ গ্রামে ঈদ

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের সদর উপজেলার চরখারচর মধ্যপাড়া ও চরখারচর উত্তর পাড়া, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী  মধ্যপাড়া ও  গোবিন্দনগর এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার রনগাঁও চতল গ্রামে ঈদুল আজহা পালন করা হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে এই পাঁচ গ্রামের কিছু মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন।

পটুয়াখালীর ২২ গ্রামে ঈদ

পটুয়াখালী সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার ২২ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মুসলমান আগাম ঈদুল আজহা পালন করছে।

সোমবার সকাল ৯টায় সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফ জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জামাতের পর সেখানে পশু কোরবানি করা হয়েছে।

বদরপুর দরবার শরীফের খাদেম মো. নাজমুস শাহাদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১৯২৮ সাল থেকে এখানকার গ্রামবাসীরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছে।

সদর উপজেলায় পাঁচটি গ্রাম, দুমকী উপজেলায় দুটি, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় তিনটি, বাউফল উপজেলায় তিনটি, গলাচিপা উপজেলায় তিনটি এবং কলাপাড়া উপজেলায় ছয় গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে এরা চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও বদরপুর দরবার শরীফ এবং চানটুপির অনুসারী হিসাবে পরিচিত।

এছাড়া মৌলভীবাজারে কুলাউড়া, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গলে শতাধিক পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা পালন করেছে।

সোমবার সকাল সোয়া ৭টায় শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা ভিলার ছাদে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জামাতে ইমামতি করেন আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব উজান্ডি)। নামাজ শেষে তিনটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়।

আব্দুল মাওফিক চৌধুরীর বলেন, গত ৮ বছর ধরে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।