ফেরির অপেক্ষায় থমকে ঈদযাত্রা

ঈদে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি যানবাহনের চাপ, পদ্মা নদীর তীব্র স্রোত এবং ফেরিঘাটের সমস্যার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2016, 02:43 PM
Updated : 9 Sept 2016, 06:04 PM

ছুটি শুরুর প্রথম দিন শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে হাজারো যানবাহনকে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।   

ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাতায়াতে এ দুটি নৌপথ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ-

মানিকগঞ্জ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া প্রান্তে চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ নম্বর ঘাটটি শুক্রবার বেশ কিছু সময় বন্ধ ছিল। এছাড়া তীব্র স্রোতের কারণে ২ নম্বর ঘাটটিতে ফেরি ভিড়তে পারছে সময় লাগছে বেশি।

এসব কারণে যানবাহন পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি সময় লাগছে। এ কারণে ফেরির ট্রিপসংখ্যা কমে গেছে।

শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় তিন শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব কোচের সারি পাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কের নবগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাট থেকে টেপড়া-নালী সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ি, পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কের আরসিএল মোড় থেকে ৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ও সংযোগ সড়কের নবগ্রাম-সইলাবাদ-নালী সড়কে এক হাজারের বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছে।

এসব যানবাহনের যাত্রীরা ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।

ঢাকার গাবতলীতে শুক্রবার সকাল ৮টায় জে আর পরিবহনের একটি কোচে ওঠেন মন্টু সাহা (৪০)। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই মেয়েশিশু। আরসিএল মোড় এলাকায় তার সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরে যাচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কের নবগ্রাম এসে পৌঁছায় তাদের কোচ। বিকাল ৪টায় মাত্র এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরসিএল মোড়ে এসেছে।

পাশের সোহাগ পরিবহনের অপর যাত্রী ফজলুল করিম বলেন, “পাঁচ ঘণ্টা ধরে গাড়ির ভেতর আটকা আছি। প্রচণ্ড গরমে দেড় বছরের শিশু শুধু কান্না করছে। কিচ্ছু খাচ্ছে না।”

শুধু তারাই নন, এ রকম হাজারো যাত্রী পাটুরিয়া ঘাটে এসে যানজটে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) তানভীর হোসেন বলেন, “দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাটসংকট ও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে যানজটের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেছে।”

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা দুপুরে বলেছিলেন, দৌলতদিয়া প্রান্তে ৩ নম্বর ঘাটটির মেরামতের কাজ চলছে। এটি সচল হলে যানবাহন পারাপারে গতি ফিরে আসবে।

পাটুরিয়া ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, যাটজটের মধ্যে যানবাহনগুলোকে সৃশৃঙ্খলভাবে ফেরিতে ওঠানামা করাতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

রাজবাড়ী

পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ফেরির ট্রিপ কমে যাওয়ায় যান পারাপার ধীরে হচ্ছে। এ কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘ সারিতে যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। 

শুক্রবার দুপুরে একটি ঘাট বন্ধ হলেও দুই ঘণ্টার মধ্যে মেরামত করা হয়। যানবাহন পারাপারে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। থেমে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম জানান, বেলা ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দ্রুত মেরামত শেষে বেলা ২টায় পুনরায় চালু করা গেছে।

“নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচলে দ্বিগুণ সময় লাগায় ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। এ কারণে ফেরি চললেও সময় বেশি লাগার কারণে উভয় পাড়ে আটকে পড়া যানবাহনগুলো পার হতে বেশি সময় নিচ্ছে।

“এ কারণে যাত্রী দুর্ভোগও বেড়েছে।”

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, বিকাল ৪টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পাঁচ শতাধিত যানবাহন নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৬টি ফেরির মাধ্যমে যানবাহন পার করা হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

শিমুলিয়া প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় পাঁচ শতাধিক যান রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার এই রুটে গাড়ির চাপ না থাকলেও শুক্রবার ভোর থেকে পচে পড়া ভিড়। ফাঁকা নেই লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটও।

“শিমুলিয়া প্রান্তেই প্রায় চারশ ছোটগাড়ি, ৭০টির মতো বাস ও বেশ কিছু ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। ভোর থেকেই ঘাটে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে।”

তবে মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই বলে জানান তিনি।

“যাত্রীরা তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছার জন্য বাসে করে ঘাটে এসে লঞ্চ বা স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে,” বলেন মোশারফ।

দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে ড্রেজিং করা চ্যানেলটি খুলে দেওয়ায় ফেরিগুলো আগের চেয়ে বেশি বাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শাহ খালেদ নেওয়াজ।

তিনি বলেন, ড্রেজিংয়ের কারণে চ্যানেলের গভীরতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে একসঙ্গে ফেরি আসা-যাওয়া করতে পারছে। এতোদিন যখন একটি ফেরি প্রবেশ করত তখন বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য ফেরিগুলোকে চ্যানেলের মুখে অপেক্ষা করতে হত।

“তাই পারাপারে সময় কম লাগছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নেই পৌঁছতে পারবে বলে আশা করছি।”

মাদারীপুর

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ঢল নেমেছে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে।

শুক্রবার সকাল থেকেই এই রুটে লঞ্চ, ফেরি, স্পিডবোটসহ সব নৌযান ও যানবাহনে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

শিমুলিয়া ফেরি ঘাটের অতিরিক্ত চাপের ফলে কাওড়াকান্দি ঘাটেও গরুবাহী ট্রাকসহ যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়েছে।

দুপুরে উভয় ঘাটে ৫ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। নাব্য সংকটে ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হওয়া ও ধারণক্ষমতার কম যান নিয়ে ফেরি চলায় সংকট আরও বেড়েছে।

এদিকে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ফেরি ঘাটে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন না থাকায় ঘাটে আসা যানবাহনগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার হোসেন জানান, ঘাটে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ কাজ করছে।