ফারাক্কা ব‌্যারেজ নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই কথা

পদ্মায় পানি বেড়ে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ার মধ‌্যে ভারতের ফারাক্কা ব‌্যারেজ নিয়ে দুই রকমের বক্তব‌্য এসেছে সরকারের দুই মন্ত্রীর কাছ থেকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 01:58 PM
Updated : 28 August 2016, 01:58 PM

রাজশাহী-কুষ্টিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক প্লাবনের জন‌্য ভারতের এই ব‌্যারেজের সব গেইট খুলে দেওয়াকে দায়ী করেছেন তথ‌্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

অন‌্যদিকে দুর্যোগ ব‌্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মনে করেন, ফারাক্কা ব‌্যারেজ পুরো খুলে দিলেও বাংলাদেশে তার কোনো প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশে ব‌্যাপক বিরোধিতার মধ‌্যে চার দশক আগে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় অভিন্ন নদী গঙ্গায় ফারাক্কা ব‌্যারেজ নির্মাণ করে ভারত সরকার।  

ওই ব‌্যারেজের মাধ‌্যমে ভারতের পানি প্রত‌্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশ তার প্রাপ‌্য পানির দাবি জানালে ঢাকা ও নয়া দিল্লির মধ‌্যে চুক্তি হয়।

তবে অভিযোগ রয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে ভারত তার প্রয়োজন মেটাতে পানি আটকে রাখলেও বর্ষা মৌসুমে প্লাবন এড়াতে পানি ছেড়ে দেয়, যা বাংলাদেশকে ভাসিয়ে নেয়।

চলতি বর্ষা মৌসুমে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মায় পানি বেড়ে কূলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলে ফারাক্কা ব‌্যারেজের সব ফটক খুলে দেওয়াকে দায়ী করেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন।

পদ্মার পানি বেড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকাও প্লাবিত হয়েছে, যার মধ‌্যে জাসদ সভাপতি ইনুর নির্বাচনী এলাকাও রয়েছে।

তথ‌্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু

রোববার ভেড়ামারা উপজেলার চর গোলাপনগরে পদ্মা নদীর পাড়ে বন্যাদুর্গতদের মধ‌্যে ত্রাণ বিতরণের সময় ফারাক্কা ব‌্যারেজের প্রভাব নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান।

তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “অভিন্ন নদীর উপর একতরফা গেইট খুলে দেওয়াটা সঠিক কাজ নয়। এ বিষয়ে আমাদের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করব।”

বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করে স্থানীয় সংসদ সদস‌্য ইনু বলেন, “স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য শেখ হাসিনার সরকার পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করবে। স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য। ত্রাণমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তদারকিতে এই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”

একই সময়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব‌্যবস্থাপনামন্ত্রী মায়া চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় ফারাক্কা ব‌্যারেজ নিয়ে কথা বলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া

আওয়ামী লীগ নেতা মায়া বলেন, “এক সময় আমরা বলেছি ফারাক্কার বাঁধ আমাদের জন্য মরণ ফাঁদ। কিন্তু এখন তা ভারতের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“তারা ফারাক্কার পুরো বাঁধ ছেড়ে দিলে কিংবা ভেঙে দিলে আমাদের দেশে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। পদ্মার পানি এখনও বিপদসীমার নিচে আছে। ফারাক্কার পানি আমাদের কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করি।”

দুর্যোগ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তা করার জন্য আমরা নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”

রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বাড়লেও রোববার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। তবে তীব্র স্রোতে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফরিদপুরেও নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় ৪৫ মিটার ধসে গেছে।