বন্যায় ভাসছে উত্তরের জনপদ

উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2016, 06:00 PM
Updated : 29 July 2016, 06:00 PM

ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলসহ নানা সম্পদ। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে ।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও বগুড়া।

এছাড়া দেশের মধ্যভাগের জেলা ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মুন্সীগঞ্জও বন্যার কবলে পড়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলায় অন্তত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৭টির অধিকাংশ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে।

বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। গবাদিপশু মারা গেছে ৭৭টি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অব্দুল মোত্তালিব মোল্লা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

কুড়িগ্রামের চিলমারী

এ জেলার দুর্গম চরের মানুষ বন্যার পানি ও বৃষ্টির মধ্যে অমানবিক জীবনযাপন করছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট ও পানিবাহিত নানা রোগ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বলেন, শুক্রবার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ছিল বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপরে এবং কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ছিল বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপরে।

“বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।”

জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অব্দুল মোত্তালিব মোল্লা জানান, জেলার নয় উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ৭২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় এক হাজার ১৮৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।

এছাড়াও  নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ। মৃত গবাদি পশুর সংখ্যা ৭৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, কার্লভাটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ৫২৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এছাড়াও ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় ৯৭৫ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ইউনিয়নের অর্ধেক বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কারণ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম।

সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আবেদিন জিল্লুর বলেন, দুর্গত এলাকায় ৮৫টি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবার কাজ করছে। পর্যাপ্ত মজুদ আছে স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন বলেন, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলমান বন্যায় আট হাজার ৩৭৩ হেক্টর ফসল জলমগ্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন কৃষক।

“এক হাজার ৮৯ হেক্টর শাকসবজি, দুই হাজার ৪১৮ হেক্টর বীজতলা, তিন হাজার ১৪৯ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত, ৮৯১ হেক্টর আউশ ক্ষেত ও ৮২৬ হেক্টর পাট ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাট কেটে পেলার পরামর্শ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা ও ৭০০ মেট্রিক টন চাল চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্র তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হবে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ঘনশ্যামপুর, গারুহারা, বলদীপুর, ভুষিরভিটাসহ কয়েকটি গ্রামে শুকনো জায়গা মেলা ভার। ঘোগাদহ থেকে  যাত্রাপুরগামী পাকা সড়কটিতে এখন চলছে নৌকা। শত শত পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও যাত্রাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চাকেন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়ে আছে।

“খাদ্যকষ্টের পাশাপাশি খাবার পানি, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের অভাব ভোগাচ্ছে বানভাসী মানুষের। পুরো ইউনিয়ন এখন ভাসছে বন্যার পানিতে। বাঁধ ও সড়কের কিছু অংশ কেবল শুকনো রয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো ৫-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।”

কুড়িগ্রামের চিলমারী

পানি বাড়তে থাকায় মাচায় আশ্রিত মানুষজন ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে বলে জানান তিনি।

ইউপি সদস্য রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন মিয়া বলেন, গত সোমবার মারা যান এই গ্রামের দিনমজুর কুদরত আলী। কিন্তু বাড়ি ও আশেপাশে  দাফনের মতো জায়গা মিলছিল না। দুটি ঘরের একটিতে তখনও কিছুটা শুকনো ছিল। বাধ্য হয়ে সেখানে খোড়া হয় কবর। তারপর চিরবিদায় দেয়া হয় হতভাগ্য এই দিনমজুরকে। পানি বাড়ায় এখন ডুবে গেছে সেই কবরও।

মৃত দিনমজুরের স্ত্রী রহিমা জানান, বাড়িভিটার চার শতক জমি ছাড়া কোনো সহায় সম্বল নেই তাদের। তার রয়েছে ছোট ছোট তিন সন্তান। বন্যার পানি শুকালে কবরের জায়গা বাদ দিয়ে ঘর তৈরি করতে হবে নতুন করে।         

চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, চিলমারীতে বুরুজের পাড় এলাকায় শুক্রবার ভোরে কাঁচকোল বাজার সড়ক ভেঙে প্রায় ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে ভেঁসে গেছে আটটি ঘর। এতে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং নতুন করে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাপারীর বাজার এলাকার সাথে কাঁচকোল বাজার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো।

গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

শুক্রবার গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৯০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৮৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বন্যা কবলিত এলাকায় গরু চুরি ও ডাকাতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁধে আশ্রিতরা খোলা জায়গায় রোদ-বৃষ্টিতে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। জেলার হাট-বাজারগুলোও ভাসছে পানিতে।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কুমার সরকার বলেন, শুক্রবার বিকাল থেকে গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি স্থিতি হয়ে এসেছে। বিকাল ৩টার পর থেকে পানি আর বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিতভাবে বালির বস্তা ফেলে বাঁধ সংস্কার কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার জেলার বন্যা কবলিত সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামের দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৩ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। শুক্রবারও পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে।

“পানিতে নিমজ্জিত ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ আছে। ৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ১২০টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ  আ কা ম রুহুল আমিন জানান, তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ৭১২ হেক্টর জমির শাক-সবজি, আমন বীজতলা, রোপা আমন ও আউশ ধান।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শামসুল আজম বলেন, বন্যার্তদের মাঝে চাল, ডালসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় অতিরিক্ত ত্রাণের চাহিদা জানিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

জামালপুরে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি

শুক্রবার যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপসসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলার ৫০টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পানিবান্দি লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ছে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল মনজুর মো. আব্দুল হাই জানান, জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫০টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভা এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে।

“বন্যায় এসব এলাকার ৫ লাখ ২৯ হাজার ২২০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। পানিবন্দি লোকজনের মাঝে ৩শ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৭শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।”

স্থানীয়রা জানান, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মেলান্দহের দুরমুঠ এলাকায় রেল লাইনে উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় মেলান্দহ রেলস্টেশন থেকে ইসলামপুর হয়ে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার উপক্রম হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল জানান, ইসলামপুরের যমুনা তীরবর্তী এলাকা বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এসব এলাকার পানিবন্দিদের ঘরে ঘরে ত্রাণের জন্য হাহাকার এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র শংকট চলছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকার বাড়িঘর এবং ফসলি জমির মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যেরও তীব্র সংকট চলছে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ

তিনি আরও বলেন, যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর বাড়িঘরসহ বন্যার তীব্র স্রোতে ভেসে যাবার উপক্রম হয়েছে। তিনি চরাঞ্চলের পানিবন্দিদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম শুক্রবার জামালপুরের মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যাকে ধৈর্য্য ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

শিগরিই বন্যা কবলিত লোকজনের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। 

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। নতুন করে আরও দুইটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার মোট ৩৩টি ইউনিয়ন এখন বন্যাকবলিত হওয়ায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বিকল্প চুইয়ে বাঁধে পানি সরছিল এবং চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, যমুনায় অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে বাধে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে, যে কারণে সদর উপজেলার রানীগ্রামের শিমুলতলী এলাকায় বাঁধের কয়েকটি স্থান দিয়ে পানি চুইয়ে সরছিল। বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যেই সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারি বলেন, যমুনার পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের  নদী তীরবর্তি কয়েকটি এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব এলাকার  কয়েকশ বাড়িঘর ও রাস্তা-ঘাট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালি উদ্দিন বলেন, সরকারি হিসাবে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ৩৩টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে সাড়ে ১০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। ১২শ বাড়িঘর আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য ১৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলার পাঁচটি উপজেলার বন্যাকবলিতদের মাঝে ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও ত্রাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

বগুড়ার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী আতাউর রহমান জানান, জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না বলে তিনি জানান।

বগুড়ার ধুনট

সরজমিনে ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় মাঠে কৃষকরা পাট জাগ দিচ্ছে। পাটের আঁশ সংগ্রহ করে তা বিদ্যালয়ে বারান্দায় রাখছে। ফলে বিদ্যালয় ভবন দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আলী আজম বলেন, “পানির কারণে যেতে পারিনি। শুনেছি বিদ্যালয় মাঠে পাট জাগ দিয়েছে এবং পাটের আঁশ সংগ্রহের পর পাটখড়ি বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাখা হচ্ছে।”

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ২টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার তিনটি উপজেলার ১১ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ হাজার পরিবারের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী জহিরউদ্দিন বলেন, সদরের ডিক্রিরচরের চর টেপুরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাড়ারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গদাধরডাঙ্গি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব চরটেপাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢোকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

পূর্ব চরটেপাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব বলেন, চার দিন ধরে বিদ্যালয়টিতে পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু নঈম মোহম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, তিন উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহয়তা দেওয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার দুটি উপজেলার সাতটি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় প্রায় চার হাজার মানুষ পানিন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল বলেন, লৌহজং উপজেলার কনকশার, মাওয়া ও যশলদিয়া এলাকা এবং টুঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল, বানারী, কামার খাড়া ও নগরজোয়ার পাঁচগাও এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

এসব এলাকার দুই থেকে তিন হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, প্রশাসন জলমগ্ন এলাকার মানুষের পাশে রয়েছে। সরকারিভাবে সব রকম প্রস্তুতি আছে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ ঘোষ।

জেলার অন্য কোথাও বন্যার খবর পাওয়া যায়নি।

পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সামনের সড়কে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ২ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাপস্থাপক শফিকুল ইসলাম।