আব্দুল্লাহর বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বল্লভপুর গ্রামে। তবে ছোটবেলা থেকে পারবারিকভাবে তাকে মোতালেব হোসেন নামে ডাকা হত বলে তার বড় ভাই নুরুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, “১২ বছর আগে নওগাঁর সাপাহার আলাদি মাদ্রাসায় ভার্তি হওয়ার পর হুজুররা তার নাম পাল্টে রাখে আব্দুল্লাহ।”
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার কল্যাণপুরের এক বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি নিহত হন। পরে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার থেকে পরিচয় উদঘাটন করে তার নাম ‘আব্দুল্লাহ’ বলে জানায় পুলিশ।
আব্দুল্লাহ ওরফে মোতালেব চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে চতুর্থ। তার বাবা ও অন্য ভাইয়েরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক।
আব্দুল্লাহর লাশ শনাক্ত করার জন্য বৃস্পতিবার সকালে তার বাবা সোহরাব আলী ও ভাই নুরুল ইসলামকে ঢাকায় পাঠায় পুলিশ।
পুলিশের তত্ত্বাবধানে পাবলিক বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার আগে সোহরাব আলী সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল্লাহ ভালোভাবে লেখাপড়া করবে, ভালো চাকরি করবে - এ আশায় পরিবারের আয়ের একটি বড় অংশ তার পেছনে ব্যয় করা হত।
“সে আমাদের শ্রমের টাকায় মানুষ হত্যার যে পাপাচার করেছে তার কোনো ক্ষমা নেই। পরিবারের কেউ তার মুখ দেখবে না, আমরা তার লাশ নেব না। ওই লাশ বল্লভপুর গ্রামের কোথাও দাফন করতে দেওয়া হবে না।”
এর আগে ঈদের দিন সকালে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছে হামলার সময় নিহত ‘জঙ্গি’ আবীর রহমানের লাশ পরিবার গ্রহণ না করায় তাকে কিশোরগঞ্জে দাফন করা হয়। তার জানাজায় একজন ইমাম ছাড়া অন্য কেউ অংশ নেননি।
বড় ভাই নুরুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসা থেকে আব্দুল্লাহ খুব একটা বাড়ি আসতেন না।
“মোবাইলে আমার সাথে ছাড়া আর কারও সাথে যোগাযোগও করত না। সর্বশেষ ১০-১২ দিন আগে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন সে নৌবাহিনীতে তার চাকরি হবে বলে জানায়। কোরবানির ঈদে বাড়ি ফেরার কথাও বলেছিল।”
নবাবগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, আব্দুল্লাহ নওগাঁর মাদ্রাসা থেকে তাওরা হাদিস পাস করার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আইডিয়াল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে দাখিল ও আলিম পাস করার পর ফাজিলে ভর্তি হন।
আব্দুল্লাহর প্রতিবেশী আবু তাহের, বন্ধু সোহেল রানা ও আবুল কাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শান্ত প্রকৃতির আব্দুল্লাহ মাদ্রাসায় ভর্তির পর খানিকটা বদলে যান।
আবু তাহের বলেন, এক বছর আগে একবার বাড়িতে এসে দোয়া করা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আব্দুল্লাহ।
“নামাজে দোয়া করা যাবে না এই ফতোয়া দিলে তার সঙ্গে এলাকার লোকজনের ঝগড়া হয়। তারপর আর সে গ্রামে আসেনি।”