বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালাপুর নীলফামারী ও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 02:42 PM
Updated : 24 July 2016, 02:42 PM

রোববার যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফলে জামালপুরের ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।আর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ১০টি গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে।

জামালপুর:

যমুনার পানি বেড়ে জামালপুরের চার উপজেলার অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বলেন, যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া, সাপধরি, চিনাডুলি, বেলগাছা, পাথর্শী, কুলকান্দি ও ইসলামপুর সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে যমুনার প্রবল স্রোতে চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া-শিংভাঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানান ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।

ইসলামপুরের নোয়ারপাড়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল বলেন, তার ইউনিয়নের রাজনগর, করিরতাইর, তাড়তাপাড়া, মাইজবাড়ি, কাজলা ও কাঠমা এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এসব এলাকার অধিকাংশ পাট ও ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ি ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে বলে চেয়ারম্যান সেলিম খান জানিয়েছেন।

এছাড়া মাদারগঞ্জ অন্তত ১৫ হাজার ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে শুকনো খাবারও বিতরণ করা হয়েছে।

নীলফামারী:

এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত আর উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নীলফামারিতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রোববার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান এ কথা জানান।

তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার সারাদিন ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত আর নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন বলেন, ডিমলা উপজেলার ১০টি গ্রামের বন্যা কবলিতদের শুকনো খাবার,৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট:

টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ পরিবার।

তিস্তা ব্যারাজের (ডালিয়া) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান রাত সাড়ে ৯টার  দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।”

এদিকে ব্যারেজের পাশে ভাটিতে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা একে এম ইদ্রিস আলী বলেন, লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা ও আদিতমারীর উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে গেছে নদী ভাঙন ।

তিন উপজেলায় বন্যা কবলিতদের মাঝে নগদ সহায়তা ছাড়াও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আলম সরকার বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি আমরা সবসময় পর্যবেক্ষণ করছি। ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত রয়েছে।”