গুলশান হামলা: সাইফুলের বাড়িতে কান্না, লাশের অপেক্ষা

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারির নিহত পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশের অপেক্ষায় আছেন তার স্বজনরা।

শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2016, 08:50 PM
Updated : 31 July 2016, 07:15 PM

ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে ‘হামলাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত সাইফুলের লাশের খোঁজে মঙ্গলবার সকালে গুলশান থানায় যান তার কয়েকজন স্বজন।

“সাইফুলের পরিচয় নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় বাড়ি থেকে তার পরিচয়পত্র আনার জন্য বলেছেন থানার এক দারোগা। পরিচয় নিশ্চিত হলে লাশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি,” বলেছেন সাইফুলের ভায়রা মো. কবীর হোসেন।

সাইফুলের লাশ এখন সিএমএইচে আছে বলে থানা থেকে তাকে জানানো হয়েছে।

সাইফুল ইসলাম চৌকিদার ১০ বছর জার্মানি থাকার পর দেশে ফিরে বছর দেড়েক আগে কাজ নিয়েছিলেন হলি আর্টিজানে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সাইফুল। তার ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়ায় থাকেন। তিন বোনের সবার বিয়ে হয়েছে, থাকেন স্বামীর বাড়িতে।

১০ বছর জার্মানিতে থাকার পরে দেশে ফিরে দেড় বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে পিৎজা তৈরির শেফ হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সাইফুল।

শুক্রবার রাতে হামলার খবর গণমাধ্যমে প্রচার হতে দেখে সাইফুলকে ফোন করে না পেয়েই পরিবারে শুরু হয় আহাজারি, যা চলছে গত চারদিন ধরে।

সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী সোনিয়া আকতার (২৭) দুই মেয়ে সামিয়া (১০) ও ইমলিকে (৭) নিয়ে আহজারি করছেন। মাঝে মাঝে অচেতন হয়ে পড়ছেন। জ্ঞান ফিরলেই শুরু হয় ফের কান্না।

মা সমেরা বেগম (৭০) আহাজারি করতে করতে অনেকটা ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু আগন্তুকদের দিকে চেয়ে বলতে থাকেন: “আমার বাবা, আমার বাবা কই গেল? কোনসুম আসবে?”

প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে আসছে,আর যাচ্ছে।

সমেরা বেগম জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসতে চেয়েছিলেন সাইফুল। বৌ ও মেয়েদের জন্য নুতন কাপড় নিয়ে আসার কথা ছিল তার।

শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী হলি আর্টিজানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর জিম্মি ২০ জনের মৃতদেহের পাশাপাশি আরও  কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করে।

পরে হামলাকারী হিসেবে পাঁচজনের লাশ সাংবাদিকদের পাঠায় পুলিশ। তার আগেই জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বরাতে পাঁচ হামলাকারীর ছবি আসে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের মাধ্যমে।

পুলিশের দেওয়া ছবিগুলোর মধ্যে চারটির সঙ্গে আইএসের দেওয়া চারজনের ছবির মিল পাওয়া গেলেও মিলছিল না শেফের পোশাক পরা একজনের চেহারায়।

পরে সাদা অ্যাপ্রন পরা ওই ব্যক্তিকে হলি আর্টিজান বেকারির ‘শেফ’ সাইফুল ইসলাম চৌকিদার বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।