উজ্জ্বলের বাঁশের ঘুনি তৈরি হচ্ছে যন্ত্রে

একজন কারিগর বাঁশের শলাকা দিয়ে যেখানে দিনে একটি মাছ ধরার ঘুনি বা খাঁচা তৈরি করতে পারেন, সেখানে দিনে ২০টি ঘুনি তৈরির মত এক যন্ত্র তৈরি করে চমক দেখিয়েছেন মাগুরার তরুণ উজ্জ্বল লস্কর।

মাগুরা প্রতিনিধিঅরন্য হাসান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2016, 04:30 AM
Updated : 1 July 2016, 04:30 AM

লোহার পাত ও সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি উজ্জ্বলের এই ‘মেশিন’ চালাতে বিদ্যুৎ লাগে। কিন্তু তাতে ঘুনি তৈরির খরচ ৪০ শতাংশ কমে আসছে বলে তরুণ এই উদ্ভাবকের দাবি।

বাঁশের তৈরি চৌকো খাঁচা আকৃতির এই ফাঁদ জলস্রোত আছে এমন জায়াগায় পেতে রাখা হলে তাতে আটকা পড়া ছোট মাছ আর বের হতে পারে না। গ্রামাঞ্চলে ক্ষেতের আইল, বিল বা খালে মাছ ধরার জন্য জনপ্রিয় এই সরঞ্জাম কোনো কোনো এলাকায় ‘চাঁই’ বা ‘বানা’ নামেও পরিচিত।

শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতি মালোপাড়ার মাধ্যমিক পাস করা উজ্জ্বল বলছেন, গ্রামের মানুষ হাত দিয়েই বাঁশের ঘুনি তৈরি করে থাকেন। তিনিই প্রথম যন্ত্রের মাধ্যমে এই ফাঁদ তৈরি করতে পেরেছেন।  

“বাঁশের সরু শলাকা ও লতা দিয়ে হাতে ঘুনি তৈরি করা যায় দিনে বড় জোর একটি। এ কারণেই যন্ত্র বানানোর কথা আমার মাথায় আসে।”

এরপর ২০১২ সালে লোহার পাত ও সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এ যন্ত্রটি তৈরির কাজে হাত দেন উজ্জ্বল লস্কর। চার বছর চেষ্টার পর চলতি বছর সাফল্য আসে।

২০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি এই যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ঘুনি তৈরি করা যাবে বলে জানান তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই যন্ত্রে প্রথমে তাঁতে কাপড় বোনার মত করে শলাকাগুলো বুনে দেওয়া হয়। পরে হাতে দিয়ে বেঁধে ঘুনির আকার দেওয়া হয়।”

যন্ত্রে ঘুনি তৈরি করায় উৎপাদন খরচ কম পড়ছে জানিয়ে উজ্জ্বল বলেন, “আগে একটি ঘুনি বানাতে খরচ ছিল কমবেশি ২০০ টাকা। যন্ত্রের সাহায্যে এক দিনে অনেক ঘুনি তৈরি হওয়ায় দাম শতকরা ৪০ ভাগ কমে যাচ্ছে। মুনাফাও আসছে ভালো।”

সরকারের সহায়তা পেলে এ যন্ত্রের আরও উন্নয়ন করতে পারবেন বলে আশা করছেন উজ্জ্বল।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক সুনীল বিশ্বাস বলেন, “এটি বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে মাগুরায় ঘুনির যে বাজার রয়েছে তা আরও প্রসারিত হবে।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর নন্দী বলেন, গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সরঞ্জামের চাহিদা রয়েছে। তবে মাছ ধরার জন্য সরকারিভাবে যেসব উপকরণে সহযোগিতার নির্দেশনা আছে, তার মধ্যে ঘুনি নেই। ফলে আপাতত উজ্জ্বলকে পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে কোনো আশ্বাস তিনি দিতে পারছেন না।