বগুড়ায় কম খরচের কৃত্রিম পা সংযোজন

স্বল্প খরচে স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম পা সংযোজনের কাজ শুরু করেছেন বগুড়ার আমির হোসেন।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 08:41 AM
Updated : 26 June 2016, 08:47 AM

নিজ ল্যাবরেটরিতে তৈরি কৃত্রিম হাত ও পা ‘অবিশ্বাস্য’ কম মূল্যে সংযোজন করা যাবে দাবি আমির হোসেনের।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বহু মানুষ পঙ্গু হয়। তখন থেকে তিনি এ কাজের চিন্তা করেন।

“তিন মাস আগে কাজ শুরু করে কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য এ পর্যন্ত ১০টি ডাইস তৈরি করেছি। এছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরি করছি। আগামী দুমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম পা সংযোজন করা সম্ভব হবে।

“ইতিমধ্যে দুই জনের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছি। তাদের হাঁটুর উপরে কেটে ফেলা হয়েছে।”

এদের একজন দোকান কর্মচারী ও অন্যজন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অফিসের কর্মকর্তা বলে জানান আমির হোসেন।

চীন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজনের ল্যাবরেটরি রয়েছে উল্লেখ করে আমির হোসেন বলেন, সরকার সহযোগিতা করলে একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি বা হাসপাতাল তৈরি করে দেশেই কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজনের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এতে দেশের অসংখ্য মানুষ স্বল্প খরচে কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজনের সুযোগ পবেন।

তিনি বগুড়ায় ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে যে কাজ করতে পারবেন তা করতে বিদেশে গেলে ৩০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ পড়বে বলে দাবি তার।

“কৃত্রিম পা ও হাত তৈরির অন্যতম উপকরণ কার্বন ফাইবার প্লেট বা শিট। আমি বিদেশ থেকে এ উপকরণ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে কাজটি আরও সহজ হবে।”

দেশে কার্বন ফাইবার প্লেট উপাদানে খরচ বেশি বলে জানান আমির হোসেন।

আমির হোসেন বলেন, ২০০৩ সালে এক দুর্ঘটনায় তার ডান পা হারান অসিত কুমার মন্ডল। তার জন্য কৃত্রিম পা সংযোজনের কাজ শুরু করেছি। আগামী দেড় থেকে দুমাসের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম পা সংযোজনের কাজ শেষ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।

অসিত কুমার বলেন, “আমি অর্থাভাবে বিদেশে গিয়ে কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারছি না। এখানে এটা সফল হলে আমি সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।”

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের কৃত্রিম হাত ও পা বিদেশ থেকে সংযোজন করতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাগে। বগুড়ায় এটি করা গেলে মানুষ কম খরচে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।  

আমির হোসেন থাকেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার টিকাদার লেনে। ১৮৮০ সালে দাদার কামারশালা থেকে বাবা আব্দুল জোব্বার ধলু ১৯৪০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন। বগুড়ায় তার পূর্বপূরুষরাই প্রথম ওয়ার্কশপ কারখানা গড়েন।

তিনি যন্ত্রকৌশল ও তড়িতকৌশলে ডিপ্লোমা নিয়েছেন। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সনদ পান।

প্রয়াত মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘মরিয়ম-আব্দুল জব্বার ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমে ১০ জনের কৃত্রিম পা বিনা খরচে সংযোজন করবেন বলে জানান আমির হোসেন।