বেতন আটকে রাখার অভিযোগ, হিসাব কর্মকর্তাকে ‘মারধর’

‘ঘুষ না পেয়ে’ কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের বেতন-ভাতা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিআহসান হাবিব নীলু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 03:42 AM
Updated : 25 June 2016, 04:31 AM

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো ইউপি সচিবদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন ওই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।  

ইউনিয়ন পরিষদ সেক্রেটারি সমিতির জেলা সভাপতি হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, ঘুষ না দেওয়ায় জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের ছয় মাসের বেতন-ভাতা আটকে রেখেছেন।

“দাবি আদায়ের জন্য গেলে উল্টো নাটক সাজিয়ে আমাদের নামে মিথ্যে মামলা দিয়েছেন তিনি।”

অথচ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠি পেয়ে জুন মাসে লালমনিরহাট জেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৯ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইউপি সচিবদের বেতনের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়করণ চিঠি আসে।

এতে কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ছয় মাসের বেতন-ভাতার ৪৭ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ওই অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আরেকটি চিঠি না পাওয়ায় ওই টাকা উত্তোলনে জটিলতা দেখা দেয় বলে দাবি করেন তিনি।

“বেতন ছাড় করতে দেরি হওয়ায় বুধবার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আব্দুছ ছাত্তারসহ কয়েকজন সচিব ট্রেজারি অফিস ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার চেম্বারে ঢুকে আমাকে মারধর করে পালিয়ে যান।”

বিষয়টি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুস ছাত্তার বলেন, “আমরা গত ছয় মাস থেকে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে আছি। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি না।

“আর জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গত ২০ দিন থেকে আমাদের বেতনভাতার টাকা অন্যায় ভাবে আটকে রেখেছেন।”

তিনি বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা কয়েকজন ইউপি সচিব রফিকুল ইসলামের চেম্বারে গিয়ে বিল ছাড় করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি বরাদ্দ বেতন-ভাতার শতকরা দুই ভাগ হিসাবে ৯৪ হাজার টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করেন।

“আমরা এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে আমাদের উপর চড়াও হন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম তার কর্মচারীদের দিয়ে আমাদের ধাওয়া করেন।”

হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি

এদিকে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ তুলে ওই শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বুধবার দুপুরে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আক্তার হোসেনের আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তারা।

আক্তার হোসেন আজাদ বলেন, এ ঘটনায় কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সচিব আব্দুছ ছাত্তারকে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন জানান, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে দুইজনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।