বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে রোববার দুপুরে বিজিবির থানচি উপজেলা সদর ক্যাম্প থেকে তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে ৭ মেট্রিক টন ২০০ কেজি চাল পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ ৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য শনিবার সন্ধ্যায় থানচি সদরে পৌঁছেছে। তার মধ্যে রোববার ৭ মেট্রিক টন ২০০ কেজি চাল তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নে হেলিকপ্টারে করে পাঠানো হয়েছে।
“সোমবার থেকে এসব চাল ৩৬০ পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারে ২০ কেজি করে বিতরণ করা হবে। আর বরাদ্দের বাদবাকি চাল সোমবার নৌকায় করে নিয়ে মঙ্গলবার থেকে বিতরণ করা হবে।”
আগামী অক্টোবর পর্যন্ত খাদ্য সঙ্কট কবলিত এলাকাসমূহে ত্রাণ অব্যাহত রাখার জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী সরকারের কাছে চাহিদা পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
গত বছরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জুমের ফলন ভালো না হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে খাদ্য সঙ্কটে পড়েন দুর্গম এই এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা।
চাল না থাকায় রেমাক্রি ও তিন্দুতে অভাবি মানুষরা বুনো আলু, ফলমূল, কলার মোচা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়।
খাদ্য সঙ্কটের এ চিত্র শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন, পত্রপত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, খাদ্যসঙ্কট কবলিত এলাকার জন্য ৪৬ মেট্রিক টন আতপ চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর আগে ১৬ মেট্রিক টন চাল পাঠানোর কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার আরও ৩০ মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়।
বরাদ্দ ৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য দুই হাজার ৩০০ পরিবারকে দেওয়া হবে। আরও ২৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মওজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, এই মাসের প্রথম দিকে সাঙ্গু নদীতে পানি কম থাকায় পরিবহন সমস্যার কারণে খাদ্য পাঠাতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু বর্তমানে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবহনে আর সমস্যা নেই।
যেহেতু খাদ্য সঙ্কট অক্টোবর পর্যন্ত চলবে তাই বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিন্দু ইউনিয়নে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মংপ্রুঅং মারমা জানান, তার ইউনিয়নে জিন্না পাড়া এলাকায় প্রায় ৪০০ পরিবার খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সহায়তায় সঙ্কট নিরসনের পথে।
ত্রাণ সহায়তা আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০ কেজির বদলে তার গ্রামে আটটি পরিবারকে ৪ কেজি ৭৫০ গ্রাম করে চাল দিয়েছে। তার পাশের গ্রাম উষামং পাড়াতে পাঁচটি পরিবারেও একই পরিমাণে চাল দিয়েছে।
“তবে বড়মদক ভেতর পাড়াতে ৬ কেজি করে দিতে দেখেছি। এ ব্যবধানটা কেন জানি না।”
তবে থানচি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কিছু পরিবার চাল নিতে আসেনি। তাই বাইরে কিছু মানুষকে ত্রাণের চাল দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কম দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালে থানচি ও রুমা উপজেলায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এসময় মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ছয় মাস এই দুর্গম এলাকার পরিবারগুলোকে একটি প্যাকেজের আওতায় প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৫০ কেজি চাল, নগদ ১২০০ টাকা ও ৩ লিটার করে ভোজ্য তেল দেওয়া হয়।