ময়নাতদন্ত: চিকিৎসকদের তনুর বাবার উকিল নোটিস

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে ‘ইচ্ছাকৃত’ বিলম্বের অভিযোগে তিন চিকিৎসকের নামে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন।   

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2016, 08:40 AM
Updated : 25 May 2016, 01:04 PM

তার পক্ষে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডাকযোগে ওই নোটিশ পাঠান। 

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহসীনুজ্জামান চৌধুরী, ফরসেনিক বিভাগের প্রধান কে পি সাহা এবং তনুর প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শারমীন সুলতানা বুধবার নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণের বিষয়টি ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পরও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্বের কারণে দেশজুড়ে সমালোচনার মধ্যে এই নোটিস দেওয়া হল।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নিজের বাসার কাছে খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু।

লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও ১৫ দিন বাদে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দলের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তেমন কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলা হয়।

এরপর আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর প্রায় দুই মাস হতে চললেও সে প্রতিবেদন আর পাওয়া যায়নি।

এদিকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সংস্থা সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ গত ১৬ মে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ডিএনএ পরীক্ষায় তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন।

সেই আলামতের ভিত্তিতেই মামলার তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।   

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহসীনুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তনুর মৃতদেহের প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলমাত না পাওয়া এবং দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে ‘কালক্ষেপণ করায়’ কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে ওই নোটিসে।

“নোটিস পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে সেখানে লেখা আছে।”

ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে তনুর খুনি দুই মাসেও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সেনানিবাসের ওই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ এসেছে। অবশ্য এ তদন্তে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।

সেনানিবাসের ভেতরে একটি স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ৩০০ গজ দূরে আরেকটি স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে না ফেরার রাতে ইয়ার হোসেন মেয়েকে খুঁজতে বের হন। দুই স্টাফ কোয়ার্টারের মাঝের অনেকটা নির্জন পথের ধারে ঝোঁপের মধ্যে অচেতন অবস্থায় তনুকে পান তিনি।

তনুকে পাওয়ার আগে খোঁজার সময় অপরিচিত কয়েক যুবককে দ্রুত সরে পড়তে দেখেছিলেন বলেও ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।

এতদিনেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর মা আনোয়ারা বেগম সম্প্রতি দুই সেনা সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তুলে বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।