সুন্দরবনে সতর্কতা, পাস-পারমিট বন্ধ

সুন্দরবনে এক মাসের মধ্যে চতুর্থবার আগুন লাগার পর চাঁদপাই রেঞ্জে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে বনবিভাগ।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 08:26 AM
Updated : 28 April 2016, 09:29 AM

বৃহস্পতিবার থেকে এই রেঞ্জে প্রবেশের পাস-পারমিট দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

এর মাধ্যমে জেলে, মৌয়াল, বাওয়ালী বা সাধারণ মানুষের চলাচল সংরক্ষিত করা হয়েছে বলে বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। 

বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা এলাকায় আগুনের সূত্রপাত হয়। গত এক মাসে ওই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের চতুর্থ ঘটনা এটি।

এদিকে সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার ঘটনার কারণ উদঘাটনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. মোজাহেদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সেখ মো. তৈহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয় বলে কমিটির সদস্য সচিব বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ জানান।

জহির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত কমিটির অপর চার সদস্যের মধ্যে রয়েছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি।

“এই কমিটি আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার কারণ উদঘাটন ও আগুনে বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে প্রতিবেদন জমা দেবে।”

তিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাঁদপাই রেঞ্জজুড়ে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। এই রেঞ্জে সব ধরনের পাস-পারমিট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল ও সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।

এর আগেও বুধবারের এই আগুনের ঘটনা তদন্তে সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, বনবিভাগ ও স্থানীয় গ্রামবাসী একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। যেখানেই ধোঁয়া দেখছে সেখানেই পানি ছিটানো হচ্ছে।

প্রচণ্ড তাপদাহ ও বাতাসের তীব্রতা থাকায় আগুন নেভাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে উল্লেখ করে সাইদুল বলেন, “তবে আগুন যাতে নতুন এলাকায়  বিস্তৃতি লাভ না করেত পারে সেজন্য ওই এলাকায় ফায়ার লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। আগুন পুরোপুরি না নেভানো গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহ, প্রবল বাতাস তো রয়েছে। তার উপর পানি আনতে হচ্ছে দূর থেকে। তাই আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

এর আগে গত ২৭ মার্চ, ১৩ ও ১৮ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আগুন লাগে। সে সময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দায়ী করা হয়।

ওই ঘটনায় দুটি মামলাও করে বনবিভাগ। তবে এখনও আসামিদের কাউকে ধরা যায়নি।

এ ব্যাপারে সাইদুল ইসলাম বলেন, “গত দুবার সুন্দরবনে যে আগুন লেগেছে তা ছিল নাশকতা। স্থানীয় গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত নিজেরা লাভবান হতে সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে, তা আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় আমরা বন আদালত ও থানা পুলিশে পৃথক দুটি মামলা করেছি।”

এই মামলার কারণে ওই চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়ে আবার পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে বলে দাবি তার।