এক মাস ধরে এ গাছকাটা চললেও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টির ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। কোনো কোনো কর্মকর্তা এখনও ঘটনাস্থলেই যাননি।
দৃষ্টিনন্দন এসব ঝাউ বাগান পর্যটকের কাছে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল রক্ষাকারীরও কাজ করে।
টেকনাফের শামলাপুর ও শীলখালী সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, পশ্চিমে সৈকতের দিকের দুটি সারি এবং পূর্বে সড়কের পাশের দুটি সারির মাঝখানের কয়েকহাজার গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
অন্তত আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা যায় কেটে নেওয়া গাছের গোড়াগুলো।
এখানে আড়াই কিলোমিটার ঝাউ বাগান থেকে গত এক মাসে অন্তত পঞ্চাশ হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
সরেজমিনে বাহারছড়ার শামলাপুরে মনখালী খালের দক্ষিণ ও শীলখালী ঝাউ বাগানের গাছ উজাড়ের চিত্র দেখা গেছে। ঝাউ বাগানের ভিতরে চোখে পড়ে কেটে নেওয়া গাছের হাজার হাজার গোড়া। কোথাও আবার বালি দিয়ে গোড়া ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে কোনো বনকর্মকর্তা ও প্রহরীর দেখা পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে একদল কিশোরী ও নারী কেটে নেওয়া গাছের ডালপালা ও গোড়া থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বনকর্মী পরিচয় দিয়ে ‘মুন্সি’ নামের এক ব্যক্তি প্রতিটি গাছের জন্য ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে সংগ্রহ করে এসব গাছ কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে। একটি প্রভাবশালী চক্র জমি দখলের উদ্দেশ্যে এসব গাছ শ্রমিক নিয়োগ করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
নুরুল আমিন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এখানে গ্রামের ঘরে ঘরে এখন এসব ঝাউ গাছ। বনবিভাগের লোকজন যেন কিছু দেখছেন না।”
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শামলাপুর এলাকার দেড় কিলোমিটার ঝাউবাগানে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা প্রায় আড়াইহাজার রোহিঙ্গা পরিবারের ৩৫ হাজার মানুষ দখল করে বসবাস করে আসছিল।
“গত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও বনবিভাগের কর্মীদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন অবৈধ বসবাসকারী ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করেছিল।
“বর্তমানে ওখানে চলছে ঝাউ গাছ কাটার উৎসব। গত এক মাসে ওখান থেকে অন্তত ৫০ হাজার ঝাউ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।”
তার ইউনিয়নের সমুদ্র সৈকতের তিনটি বাগানে পাঁচ লাখের মতো ঝাউ গাছ ছিল বলে জানান তিনি।
উপকুলীয় বন বিভাগের শামলাপুর বিটের প্রহরী আবুল বশর বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানেন। কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “সম্ভবত মাদকাসক্ত কিছু লোক এ গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।”
কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৬-০৭ সালে উপকূলীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা থেকে শামলাপুর পর্যন্ত ১০০ হেক্টর সৈকতের বালুচরে তিনটি বাগানে প্রায় পাঁচ লাখের মতো ঝাউগাছ লাগানো হয়।
গত এক মাসের মধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করেননি জানিয়ে মোহাম্মদ কবির বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের সুবিধার্থে মাসখানেক আগে ‘অল্পকিছু’ গাছ কাটা হয়েছিল। এই সুযোগে ‘কিছু দুষ্কৃতকারী’ বন বিভাগের লোকজনের অগোচরে গাছ কাটা শুরু করলে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় ২৪০টি গাছ বনকর্মীরা উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে ৬ দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, শীলখালীতে উপকূলীয় বন বিভাগের আওতাধীন এক কিলোমিটার বনায়ন রয়েছে। অপর অংশ কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগের আওতাধীন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. আলী কবির কী পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে তার তথ্য দিতে পারেননি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টেকনাফের শামলাপুর ও শীলখালীতে কিছু গাছ কাটার খবর শুনেছি। বুধবারের মধ্যেই সহকারী বন সংরক্ষককে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি তিনি আগে শোনেননি। এই প্রথম শুনেছেন। এ ব্যাপারে বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।