নতুন ঠিকানা কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র

তারা হারিয়ে গেছে কিন্তু ঠিকানা বলতে পারে না। ঠিকানা বলা শেখেনি বা বাকপ্রতিবন্ধী। এমন মেয়েশিশুদের আশ্রয়স্থল গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 02:04 AM
Updated : 8 Feb 2016, 02:09 AM

সুমাইয়ার বয়স ১২ বছর। বাবার নাম ‘সাইদ’ বলতে পারলেও পুরো ঠিকানা বলতে পারে না। সে জানে তার বাবা ঢাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। কিন্তু কোন এলাকায় তা সে জানে না। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়।

অভাবের সংসারে এক বাসায় তাকে ঝিয়ের কাজে দেয় স্বজনেরা। অল্প বয়সে ভারী ভারী কাজ দেওয়া হত তাকে। না পারলে ‘মেম’ বকাবকি করত, মারধরও করত।

শেষ পর্যন্ত গত রোজার সময় একদিন ‘মেম’ তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে শহরে বাবার সন্ধান করতে থাকে সুমাইয়া। কিন্তু বাবা কোথায় কাজ করে তা ত সে জানে না। তার পরও দিনভর খুঁজে বেড়ায়। বাবাকে না পেয়ে সন্ধ্যায় ঢাকার ফায়দাবাদ এলাকায় রাস্তার পাশে বসে কাঁদছিল সুমাইয়া। এ সময় এক মহিলা তার বৃত্তান্ত শুনে পুলিশে দেয়।

পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাকে এই কেন্দ্রে পাঠায়। সেই থেকে সুমাইয়া এখানে আছে। কিন্তু সুমাইয়া ফিরতে চায় তার মা-বাবা ও ভাই-বোনদের কাছে। এ জন্য তাকে সব সময় মনমরা হয়ে থাকতে দেখা যায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাছিমা আক্তার।

একই কেন্দ্রের নিবাসী ঢাকায় কাজ করতে এসে তিন বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানিকগঞ্জের ফাতেমা (১৭)। বাবা মুসলিম ও মা রোকেয়ার নাম এবং থানা শিবালয় বলতে পারলেও গ্রামের নাম বলতে পারে না। ফলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারছে না।

নিপু ( ৮) ‘পিতা শহীদুল্লা, গ্রাম বুলদিঘি, শাহরাস্তি’ বলতে পারলেও জেলার নাম বলতে পারে না। আংশিক বাকপ্রতিবন্ধী ১১ বছরের মাজেদা, পিতার নাম মান্নান বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারে না।

একইভাবে এ কেন্দ্রে নিরাপদ হেফাজতি হয়ে আছে অজ্ঞাত ঠিকানার মোস্তফা ও আরজা দম্পতির হারিয়ে যাওয়া স্বরূপা (১৫), ওসাইনা-হাসিনার মেয়ে ফাতেমা (১৩), মান্নান-আছিয়ার মেয়ে মিম (১২), আদর উদ্দিনের মেয়ে সালমা নাজমা (১৮), শংকরের মেয়ে পায়েল (১৭), আবুলের মেয়ে আমেনা (১৫), শাহ আলমের মেয়ে আঁখি (১৩), আছর আলীর মেয়ে আসমা (৯), শাহাদত আলীর মেয়ে শাম্মী (১০), ফারুকের মেয়ে সাদিয়া (৭), মোস্তফার মেয়ে বৃষ্টি (১০), রতনের মেয়ে জেসমিনসহ (৯) ৫১ জন এবং আরও ১৮ বাকপ্রতিবন্ধী যারা মা-বাবার নামও বলতে পারেনি।

কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাছিমা আক্তার জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্নভাবে হারিয়ে যাওয়া এই ৬৯ জন শিশু ও কিশোরী পুলিশের সহযোগিতায় আদালতের মাধ্যমে এ কেন্দ্রে এসেছে। তাদের অনেকেই ৮-১০ বছর ধরে আছে।

তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ঠিকানার অভাবে তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়িতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতায় ২০০২ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা। ১৫০ আসনের এ কেন্দ্রে বর্তমানে ১৬৭ জন নিবাসী রয়েছে। ৬৯ জন হারিয়ে যাওয়া এবং অন্যরা বিভিন্ন মামলায় আটক হবার পর কিশোর আদালতের মাধ্যমে এসেছে।

সবার জন্য রয়েছে প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা।