সিসি ক্যামেরা পাল্টে দিয়েছে মাগুরার চিত্র

মাগুরা শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ।

মাগুরা প্রতিনিধিএ বোসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2016, 07:13 AM
Updated : 6 Feb 2016, 09:33 AM

বিভিন্ন স্থানে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার উপকারিতা স্বীকার করে স্থানীয়রাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

আগে প্রতি মাসে সদর থানায় শতাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা হত।

“সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও পুলিশি অভিযানের ফলে এখন মামলার সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন সদর থানার ওসি আজমল হুদা।

পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন, নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি শহরকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করব।

“পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। এ কারণে মাগুরা এখন প্রায় মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত।”

শহরের ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, আগে বাসস্ট্যান্ডে মাস্তানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বাটপারি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

“চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর এখন প্রায় সব অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে।”

এনজিও কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান মুকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শহরের নতুন বাজার এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকসেবীদের আড্ডায় মানুষ দিশেহারা ছিল।

মানুষ এখন শান্তিতে চলাফেরা করছে এবং ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে ব্যবসা করছে বলে তিনি জানান।

একজন মাদকসেবী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তিনি দুই দশক ধরে মাদক সেবন করছেন।

“কিন্তু মাগুরায় মাদকের এমন আকাল আগে কখনও দেখিনি। দু-এক জায়গায় মাঝেমধ্যে সামান্য পাওয়া গেলেও দাম ডবল। মাদক কিনতে গিয়ে সম্প্রতি দুবার পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় নেশা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম।”

তবে মাঝেমধ্যে পাশের জেলা থেকে মাদকদ্রব্য এনে ঘরে বসে সেবন করেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী তানজিরা, ঐশি, অ্যামিসহ একাধিক ছাত্রী বলেন, আগে বখাটেরা তাদের নানাভাবে উত্যক্ত করত।

“এখন বখাটেদের চিহ্ন নেই। নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছি।”

সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ শাহাজউদ্দিন, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন ও আর্দশ কলেজের অধ্যক্ষ সূর্যকান্ত বিশ্বাস স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

অধ্যক্ষ শাহাজউদ্দিন বলেন, এইচএসসি থেকে এমএ পর্যন্ত তার কলেজে শিক্ষার্থী ১০ হাজারের বেশি। ক্যাম্পাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৯টি ক্যামেরা লাগানোর পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন শৃঙ্খলা ফিরেছে, তেমনি বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গেছে। 

জেলা বণিক সমিতির সভাপতি মুন্সি হুমায়ন কবীর রাজা বলেন, শহরের চৌরাস্তা, ভায়না, ঢাকা রোড়, মীরপাড়া, নতুন বাজার, কালিবাড়ি মোড়, টার্মিনাল, বাটিকা ডাঙ্গা, কেশব মোড়, পুলিশ লাইন, নান্দুয়ালী বাজার, জজ কোর্টের সামনে, সেগুন বাগিচা রোড় পুলিশ অফিস, হাটখোলা রোড়সহ ২০টি স্থানে ৫০-এর বেশি সিসি ক্যামেরা বসেছে পুলিশ ও পৌরসভার উদ্যোগে।

“তাছাড়া ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আরও প্রায় ৫০টি ক্যামেরা বসিয়েছেন।”

নান্দুয়ালী বিশ্বাসপাড়া মসজিদের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, পুলিশি অভিযান ও সিসি ক্যামেরার কল্যাণে সব উৎপাত বন্ধ হয়ে গেছে।

পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে যেকোনো ভাল কাজ করা সম্ভব।

শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে মাগুরায় এখন দায়িত্ব পালনে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

ক্যামেরায় তোলা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের সহজেই শনাক্ত করা যায়।