১৩৩ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে ‘প্রতিবন্ধী’ নারী

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১৩৩ ফুট উঁচু একটি বৈদ্যুতিক টাওয়ারের চূড়ায় উঠেছেন এক নারী, যিনি মানসিক প্রতিবন্ধী বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 04:20 PM
Updated : 20 April 2018, 02:16 PM

শুক্রবার বিকালে শিমরাইল মোড়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার ডেমরা ও সদর দপ্তরের দুটি ইউনিটের কর্মীরা সোয়া ২ ঘণ্টার চেষ্টায় তাকে নামিয়ে আনেন। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পারুল আক্তার (২২) নামের ওই তরুণীর বাড়ি রাজশাহীর পুটিয়া উপজেলার কুটিয়ারপাড়ার বাসের ছড়ায়।

তার স্বামী ইয়াদ উল্লাহ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো রোড এলাকায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক।

এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২ লাখ ৩০ হাজার (২৩০ কেভি) ভোল্টের সঞ্চালন লাইন প্রায় দেড়ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।

প্রতক্ষ্যদশী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, বিকাল ৩টায় পারুল আক্তার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের ১৩৩ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠতে শুরু করেন। স্থানীয়রা নামাতে চেষ্টা করলে তিনি আরও দ্রুত উপরে উঠতে থাকেন।

খবর পেয়ে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার টহল পুলিশ আসে।

টহল পুলিশের এসআই শামীম হোসেন জানান, “বিকেলে পৌনে ৪টায় এসে মেয়েটিকে তিনি বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে হাঁটাহাটি করতে দেখেন। প্রথমে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে এবং পরে ফায়ার সার্ভিসকে জানান।

এরপর ফায়ার সার্ভিসের ডেমরা স্টেশনের কর্মকর্তা সোহেলের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে একটি ইউনিট আসে। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরকেও খবর দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, এর মধ্যে পিজিসিবির সিদ্ধিরগঞ্জ অফিসের বিদ্যুতের কয়েকজন কর্মী টাওয়ারে উঠে পারুলের কোমড়ে বেল্ট দিয়ে তাকে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত করেন।

তিনি আরও জানান, বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) আনা হয়। পরে সদর দপ্তরে স্টেশন অফিসার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সন্ধ্যা ৬ টা ১২ মিনিটে পারুলকে অচেতন অবস্থায় মাটিতে নামিয়ে আনেন।

সেখান থেকে তাকে শিমরাইলের সুগন্ধা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সুগন্ধা হাসপাতালের চিকিৎসক নিলুফা ইয়াসমিন জানান,  ওই নারীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। এখন তিনি সুস্থ আছেন।

পারুলের শাশুড়ি সাজেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, পারুলের মাথায় সমস্যা রয়েছে। দেড় মাস আগে তার ছেলে তাকে (মা), স্ত্রী পারুলকে এবং তাদের ছেলে আজিজুলকে (৩) নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন।  

পারুলের মাথায় সমস্যার কারণে বাড়িওয়ালা তাদের বের করে দেন। এরপর তারা রাজশাহী যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে আসাছিলেন। সেখানে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সিদ্ধিরগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনটির বৈদ্যুতিক টাওয়ারটি ১৩৩ ফুট উঁচু। এ সঞ্চালন লাইনের মানিকনগর থেকে বঙ্গভবনে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়।

“আমরা মেয়েটির টাওয়ারের খবরটি বিকেলে ৪টার সময় পেয়েছি। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে এসে তিনজন বিদ্যুত কর্মীকে টাওয়ারে উঠিয়ে মেয়েটিকে কিছুটা বিপদমুক্ত করে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।”

এর আগে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আয়েশা আক্তার তমা নামে এক তরুণী সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী নাভা-ভুঁইয়া এলাকার আরেকটি সঞ্চালন লাইনের ১২০ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে পড়েছিলেন। তাকেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় নামিয়ে আনেন।