যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসি বহালে সন্তোষ পাবনায়

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার এলাকা সাঁথিয়ার মানুষ।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2016, 07:06 AM
Updated : 6 Jan 2016, 08:00 AM

এ রায়ে সাঁথিয়া তথা পাবনার মানুষ কলংকমুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রুত রায় কার্যকর করারও দাবি জানান।

এদিকে নিজামীর স্বজনরা এই রায়কে ‘রাজনৈতিক হত্যার ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করছেন।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে দেড় বছর আগে এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সর্বোচ্চ আদালত সেই দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়।

রায়ের খবর পাবনায় এসে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

সাঁথিয়ার ধূলাউড়ী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মতিউর রহমান নিজামী কেবল পাবনার নয়, সারা বাংলাদেশের রাজাকারদের সর্দার হিসেবে কাজ করেছে। তার নির্দেশেই ধূলাউড়ী, ডেমরাসহ পাবনার বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

“অবিলম্বে আমি এই নৃশংস রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।”

শহীদ পরিবারের সদস্য সাঁথিয়ার রাজীব হোসেন মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কখনও স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে স্বজন হারানোর বিচার পাব।

“বার বার এমপি, মন্ত্রী হয়ে এদেশের স্বাধীনতার বুকে এই বদর নেতা কালিমা লেপন করেছে। বুকের মাঝে চাপা কষ্ট নিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। আজ আমি গর্বিত।”

তিনি সরকার, দেশের প্রগতিশীল জনতা ও বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান।

নিজামীর নিজ গ্রাম সাঁথিয়ার মনমোদপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক বলেন, দেশের যেখানেই যান বাড়ির ঠিকানা বললেই মানুষ বলত রাজাকার নিজামীর দেশের লোক। আজকের এ রায় তাদের কলংকমুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিল।

পাবনার মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের বিশ্বাস বলেন, “খালেদা জিয়া সরকার এ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে, তাকে মন্ত্রী বানিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে কালিমা লেপন করেছে।

“আমরা চাই অবিলম্বে এ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করে পাবনাবাসীকে কলংকমুক্ত করা হোক।”

এ ‘কুখ্যাত’ রাজাকারের লাশ পাবনার মাটিতে দাফন না করারও দাবি জানান তিনি।

সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কমান্ডার আব্দুল লতিফ কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, “এটা রাষ্ট্রীয় বিচারিক বিষয়।”

এদিকে নিজামীর গ্রামে বসবাসরত স্বজনদের দাবি, নিজামীর ‘জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত’ হয়ে সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ করছে।

নিজামীর দূর সম্পর্কের ভাতিজা কামাল পাশা বলেন, মন্ত্রী হয়েও অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেননি নিজামী।

তিনি একজন ভালো মানুষ বলে দাবি করেন কামাল পাশা।  

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পাবনা জেলা শহর ও সাঁথিয়ায় জামায়াত শিবিরের কোনো মিছিল বা সমাবেশের খবর পাওয়া যায়নি।

পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির পরাগ বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।