প্রথমবার দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনের প্রচারে ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণসহ জনসংযোগও চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে তাদের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীরা কিছুটা নীরব।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার প্রভাবশালী নেতা ইতোমধ্যেই মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এছাড়া ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড ও একাধিক তোরণ নির্মাণ করেও প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
বিএনপির প্রার্থীদের বিলবোর্ড বা ফেস্টুন দেখা না গেলেও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন দলের জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা। তিনি পৌর নাগরিক কল্যাণ সমিতির ব্যানারে গত ছয়-সাত বছর ধরে পৌরবাসীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। মূলত পৌর মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতেই তিনি এসব কর্মসূচি পালন করছেন।
কামরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস-পানির জন্য আন্দোলন করছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে ভোটাররা আমাকেই বেছে নেবেন।”
পৌর মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সুলতানুল আজম খান। তিনি বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নির্মাণ করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতি করছি। যুব ও তরুণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করে আসছি।”
দলীয় মনোনয়ন তিনিই পাবেন বলে আশা করছেন।
৩০ অগাস্ট জনসভা করে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার নিজেকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনিও ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও তোরণ নির্মাণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
বাবুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্ত্রী ও কয়েকজন কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছি।
নির্বাচনের সুযোগ পেলে ফল তার পক্ষে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।
২ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করে বর্তমান মেয়র রমজান আলী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি গত চার মেয়াদ ধরে পৌর মেয়র।
রমজান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। সুখে-দুঃখে নাগরিকদের পাশে থেকেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্ভাব্য চার প্রার্থীই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকেই চূড়ান্ত করা হবে।
অপরদিকে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী নাসির উদ্দিন গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলেও এবার আবার প্রচারণা শুরু করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত নির্বাচনে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে ইতিবাচক ফল পাব বলে আমি আশাবাদী।”
জেলা বিএনপির সহসভাপতি আজাদ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পেলেও বিএনপির প্রার্থীরা তা পাচ্ছেন না।
“নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এক বছর আগের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছি।”
একই অভিযোগ করেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রায়হান উদ্দিনও।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী।”
তবে তিনি ফেস্টুন ও ফেইসবুকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের আশ্বাস দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
২০০৮ সালের ৪ অগাস্ট মানিকগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন হয়। মেয়াদ শেষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছর ১ অগাস্ট সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্বাচন স্থগিত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। পরে এই সমস্যার সমাধান হয়।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের অন্যান্য পৌরসভাসহ মানিকগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে, জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কমিশনার মো. মুনীর হোসাইন।