নূর হোসেনকে ফেরানো হল সেই নারায়ণগঞ্জে

স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার দেড় বছর মাথায় সেই নারায়ণগঞ্জে ফিরিয়ে আনা হয়েছে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি  নূর হোসেনকে।

নায়রাণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2015, 03:09 AM
Updated : 13 Nov 2015, 06:01 AM

নায়রাণগঞ্জের স্থানীয় এই আওয়ামী লীগ নেতাকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে  যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এরপর র‌্যাব হেফাজতে তাকে শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে নিয়ে আসা হয় ঢাকার উত্তরায়, র‌্যাব সদরদপ্তরে। 

সেখানে নূর হোসেনকে সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে র্যা ব। এরপর কালো কাচের একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে সকাল সোয়া ৮টায় তাকে নিয়ে আসা হয় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যা ব হস্তান্তর করার পর আমরা তাকে পুলিশ লাইনসের রেখেছি। সেখান থেকেই তাকে আদালতে তোলা হবে।”

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দুপুরে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামিকে নারায়ণগঞ্জের হাকিম আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কে এম ফজলুর রহমান। 

তবে সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র বিচারিক হাকিমের আদালত ইতোমধ্যে গ্রহণ করায় নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এখন আর রিমান্ডে নেওয়ার কোনো আবেদন করা হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।  

সেক্ষেত্রে জামিন না হলে আদালত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সহ সভাপতিকে কারাগারে পাঠাতে পারেন, যিনি খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পালানোর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অবশ্য তার বিরুদ্ধে থাকা অন্য ১১টি মামলার কোনোটিতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে কি না, আদালতে তোলার আগে তাও বিবেচনা করা হবে বলে ফজলুর রহমান জানান।

নূর হোসেনকে রাখা হয় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে। টিভি থেকে নেওয়া ছবি

সাদা রঙের গাড়িটিতে করে ঢাকা থেকে নূর হোসেনকে নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে। টিভি থেকে নেওয়া ছবি

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের

নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র‌্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়। 

হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন নূর হোসেন। এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই নেতা।

এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

পুলিশ সুপার মহিদ জানান, নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের এক মামলায় তার এক বছরের সাজা হয়েছে।

বন্য প্রাণী আইনে মামলায় সাজার পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে সরকার। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি।

সাত খুনের মামলায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ২২ জন কারাগারে রয়েছে। পলাতক রয়েছেন র্যারবের ৮ সদস্যসহ ১৩ আসামি।