বন্যায় গাইবান্ধায় দুই শিশুর মুত্যু, বাঁধে ভাঙন

গাইবান্ধায় বন্যার পানি ডুবে দুটি শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2015, 03:51 PM
Updated : 26 August 2015, 03:51 PM

এই দুই শিশুর মৃত্যুর খবর বুধবার জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান। শিশু দুটি মঙ্গলবার বিকেলে মারা যায়।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের লাখিয়াপাড়া গ্রামের আজাদ মিয়ার দুই বছর বয়সী শিশু লিয়ন মিয়া ঘরের মাঁচা থেকে বন্যার পানিতে পড়ে মারা যায় বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম।

এছাড়া ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, তার ইউনিয়নের মধ্য খাটিয়ামারী গ্রামের হুকুম আলীর সাড়ে তিন বছরের ছেলে নাজমুল ইসলাম বাড়ির উঠানে খেলতে খেলতে বন্যার পানিতে পড়ে মারা যায়।

এদিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে  বুধ বেলা ১২টার দিকে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে বুধবার ভোরে গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ফতেউল্যাপুর রায়বাড়ি সংলগ্ন করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। এরপর গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার আরজি খলসি, কালিকাডোবা, চাঁদপুর খলসিসহ তালুককানুপুর ইউনিয়ন, রাখালবুরুজ, কামারদহ, গুমানিগঞ্জ, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের রোপা আমন ধান, বীজতলা, বীজতলা ও শাক-সবজি তলিয়ে গিয়ে বসতবাড়িতেও পানি উঠেছে।

ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধির পাওয়ায় সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের মধ্য সাহাবাজ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ ফুট ভেঙে দক্ষিণ সাহাবাজ, উত্তর সাহাবাজ, মধ্য সাহাবাজ, গারোকাটা ও মাস্টারপাড়া এলাকার ৫শ’ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

এছাড়া সাদুল্লাপুর উপজেলার পুরাণ লক্ষীপুর এলাকায় ঘাঘট নদীর ৫০ ফুট বাঁধ ভেঙে জয়েনপুর, মাস্টার পাড়া, সাহাপাড়া ও পুরাণ লক্ষীপুর এলাকার দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের তরকমনু এলাকায় বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকৌশলী।

ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিতে গিয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, বন্যায় এ জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২১৫টি গ্রামের এক লাখ ৩৫ হাজার ১০২ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এছাড়া ৬৮ কি. মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৯ হাজার পাঁচশ’ ৩৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে এক হাজার ৪৫৫টি পুকুরের মাছ। পানিতে ডুবে দুটি গরু, তিনটি ছাগল ও ২৫২টি হাঁস-মুরগি মারা গেছে।

বন্যা দুর্গত এসব এলাকায় এ পর্যন্ত ১৩০ টন চাল ও দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান ত্রাণ কর্মকর্তা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আমিরুল ইসলাম জানান, বন্যায় বিদ্যালয় চত্বর পানি উঠার কারণে জেলায় মোট ৫৫টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান গত সোমবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এরমধ্যে রয়েছে ফুলছড়ি উপজেলায় ২৩টি, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ১৫টি, সাঘাটায় সাতটি ও সুন্দরগঞ্জে ১০টি।