ধর্ম অবমাননা করিনি, অপপ্রচার হচ্ছে: গাফফার চৌধুরী

আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদকে (স.) কটাক্ষের অভিযোগ নাকচ করে কলামনিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2015, 08:28 PM
Updated : 9 July 2015, 07:57 PM

অপপ্রচারকারীরাই এজন্য ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সোমবার এক প্রেসনোটে তিনি বলেন, “…তারা বলেছে যে আমি ধর্মবিরোধী। রসূল, ইসলাম এমনকি আল্লাহর অবমাননা করেছি। কোনো সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে? এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা এবং এ তথাকথিত ইসলামপন্থিরা এটাই প্রচার করছে।”

গত ফেব্রুয়ারিতে ওমরাহ করার কথা জানিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, “… সেই ব্যক্তি নিউ ইয়র্কে এসে ধর্মদ্রোহিতা করবে কী কারণে? ”

অপপ্রচারকারীদের চেয়ে নিজেকে ‘বড় মুসলমান’ বলে দাবি করেন তিনি।

গত শুক্রবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে এক অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিবর্তনের ইতিহাস বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে ভাষা ও ধর্মের ভিন্নতা তুলে ধরতে গিয়ে একুশের গানের রচয়িতা গাফফার চৌধুরী বলেন, “এখন যেটাকে আরবি ভাষা বলা হচ্ছে, সেই ভাষাতে কাফেররাও কথা বলত। আজকে আরবি ভাষার যে সমস্ত শব্দ আমরা ব্যবহার করি, সবই কাফেরদের ব্যবহৃত ভাষা।

“যেমন আমরা বলি, আল্লাহর ৯৯ নাম, সবগুলোই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের ভাষা ছিল। রাহমান, গাফ্ফার ও গফুর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত নাম ছিল। এখন সেগুলো ইসলাম গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষায় গ্রহণ করার শক্তি বলে বাংলা ভাষাকে আজকে দেখতে পাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা। এবং এই ভাষায় আরবি, ফার্সি থেকে শুরু করে যে কোনো প্রকার ভাষা গ্রহণ করা যায়।”

বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল থেকে তার বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। রোববার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের বাধায় নিউ ইয়র্কে নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেননি গাফফার চৌধুরী।

পরে ব্রুকলিনে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে গেলে সেখানেও বাধার মুখে পড়তে হয় আয়োজকদের। ‘মুরতাদ’, ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয় সেখানে।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের এই অনুষ্ঠানে দেওয়া আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।

আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে বক্তব্যের ব্যাখ্যায় প্রেসনোটে গাফফার চৌধুরী বলেন, “আমি আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে দেবতাদের নাম বলিনি, আমি বলেছি কালচারাল এসিমিলেশন কীভাবে প্রত্যেকটি সভ্যতা, এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতা উপকরণ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা বলা হয়, এটা যে সত্য না এটা প্রমাণ করার জন্য বলেছিলাম যে, আরবি ভাষাও ছিল এককালীন কাফেরদের ভাষা। এটা বলা কি আরবি ভাষার অবমাননা?

“তারপর বলেছি, আল্লার নাম গুণাত্মক নামগুলি আগে কাফেরদের দেবতাদেরও ছিল। তা না হলে রসূলুল্লাহর পিতার নাম আবদুল্লাহ কী করে হয়? এটা তো আর মুসলমান নাম নয়, সেখানে আল্লাহ আছে, সে আল্লাহ ছিল কাবা শরীফে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলোর ভিতরে প্রধান মূর্তির নাম। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে ইলাহ বলে, ইলাহ থেকে আল্লাহ শব্দের উৎপত্তি। এভাবে আল্লাহর রসূল আরবের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যেটা ধর্মবিরোধী নয়, সেটাকে তিনি গ্রহণ করেছেন।”

তিনি বলেন, “এমনকি হজও ইসলামের হজ নয়, এটাও সেই দুই হাজার-তিন হাজার বছর আগের কাফেরদের দ্বারা প্রবর্তিত হজ, উনি সেখানে এক ঈশ্বর বার্তাটি যুক্ত করেছেন।

“এটাই আমি বলেছি যে, এটা হচ্ছে একাডেমিক আলোচনা এবং আমি সাহাবাদের সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করিনি। আমি বলেছি যে, আমরা আরবি ভাষা না জেনে, আরবিতে সন্তানদের নামকরণ করি সেটা ভুল। আমাদের নামকরণের অর্থ জানা উচিত, যেমন আবু হোরায়রা। এটা রসূলুল্লাহর সাহাবার প্রকৃত নাম নয়। রসূলুল্লাহ তাকে ঠাট্টা করে ‘বিড়ালের বাবা’ ডাকতেন। এখন আমরা যেহেতু আরবি জানি না, আমরা সেই বিড়ালের বাবার নামটা আমরা রাখি।”

তাকে ‘মুরতাদ’ বলার জবাবে গাফফার চেধুরী বলেন, “…..রসূল বললেই বুঝি আমাদের রসূলুল্লাহকে অবমাননা করা হয়। অথচ পণ্ডিত নেহেরু যখন সৌদি আরবে যান তখন তাকে বলা হয়েছিল ‘মারহাবা ইয়া রসূলে সালাম’- ‘হে শান্তির দূত তোমাকে সংবর্ধনা জানাই’। অথচ বাংলাদেশে গিয়ে যদি কেউ বলে অমুকে একজন রসূল, মানে দূত, তাকে মুরতাদ বলা হবে।

“এই যারা আজকে মুরতাদ বলছেন তারা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আজকে তারা ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মের অবমাননা করছেন। আমি এদের শাস্তি চাই।”

তিনি বলেন, “যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, বাংলাদেশে ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারা পরবর্তীকালে সমস্ত রকম মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ইসলামের নাম করে ব্যবসা করতেছে, ব্যাংক করতেছে, ইন্সুরেন্স কোম্পানি করতেছে এবং আজকে যারা এই ধর্মকে আবার রাজনৈতিক পুঁজি করেছে তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের চাইতে অনেক বড় মুসলমান।”

সমালোচকদের তার বক্তব্য ভালোভাবে পড়ার আহ্বান জানিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, “…..আমার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ পড়ুন, তারপর যদি মনে করেন যে আমি ধর্ম, আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি, তখন তার শাস্তি বিধান করেন। কিন্তু এর আগে বিনা বিচারে একশ্রেণির মোল্লার উস্কানিতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারা যা করছেন, এটার নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। তারা আমাকে ছোট করেননি, তারা ধর্মকে, আল্লাহর রসূলকেই ছোট করছেন।”

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা এখন থেকে সরাসরি আমাদেরকে জানাতে পারেন। পুরো নাম, ঠিকানা ও ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়   probash@bdnews24.com