গ্রিসে আতঙ্কে প্রবাসীরাও

বিপুল অঙ্কের ঋণ জর্জরিত গ্রিসের খেলাপি হয়ে ইউরো জোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 08:59 PM
Updated : 1 July 2015, 05:46 AM

গ্রিসের কাছে বিভিন্ন ঋণদাতা দেশ ও সংস্থার পাওনা আছে ৩২৩ বিলিয়ন ইউরো।

মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ১৬০ কোটি ইউরো পরিশোধের কথা থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।

এর মধ্য দিয়ে উন্নত অর্থনীতির কোনো দেশ হিসেবে প্রথম ঋণখেলাপি হল গ্রিস, যাতে ইউরোজোনে দেশটির সদস্যপদও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

ঋণদাতারা চায়, কর বাড়ানোর পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ব্যয় কমাক গ্রিস। কঠোর ব্যয়সঙ্কোচনের শর্তে সায় দেয়নি গ্রিসের বামপন্থী সরকার।

বিদেশি ঋণদাতাদের কঠিন আর্থিক পুনর্গঠনের শর্তে নতুন বেইল আউট তহবিল নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে রোববার গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে গ্রিসে।

গণভোটের পরদিন আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত গ্রিস সরকার সব ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া এটিএম থেকে দিনে ৬০ ইউরোর বেশি না তোলার বিধানও জারি করা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত গ্রিকরা টাকা তুলতে এটিএম বুথের সামনে লাইন দিচ্ছেন। যে যার মতো করে কিনে মজুদ করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে বাংলাদেশিরা কেমন আছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল গ্রিসে বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি জয়নাল আবেদিনের কাছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাজের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি। তবে আমাদের লোকদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।”

বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি গ্রিসে আছেন বলে জানান জয়নাল।

তিনি বলেন, গ্রিকদের মতো বাংলাদেশিরাও এটিএমের সামনে লাইন দিচ্ছেন।

“তারাও জিনিসপত্র কিনছেন এবং পেট্রোল স্টেশন থেকে জ্বালানি কিনে রাখছেন।”

জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমাদের উপর প্রভাব পড়েছে। তবে আমরা বিদেশি বলে আলাদা করে কোনো প্রভাব পড়েনি। গ্রিকদের উপর যেমন প্রভাব পড়েছে আমাদেরও তাই হয়েছে।”

স্থানীয় গণমাধ্যমে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও গ্রিকরা ‘হুমড়ি খেয়ে কেনা’ বাদ দিচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

ছবি: রয়টার্স

“তারা আতঙ্কিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে তারা আশঙ্কা করছেন। এছাড়া মুদ্রা পাল্টে গ্রিস আবার ইউরো থেকে নিজেদের মুদ্রা ড্রাকমা চালু করতে পারে বলে ভয়ে আছেন তারা।”

তবে এতে বাংলাদেশিদের চাকরিতে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।

“তারা ঠিকমতো কাজ করছেন। চাকরি থেকে কাউকে ছাঁটাই করা হয়নি।”

অবশ্য সেখানে কার্যক্রম পরিচালনাকারী একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের শাখা অফিসও বন্ধ থাকায় ঈদে বাড়ি টাকা পাঠানো নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

জয়নাল আবেদিন বলেন, “টাকা পাঠানোর সব পথ এখন বন্ধ। তবে ৬ জুলাইয়ের পর আবার ব্যাংক খুলবে। তাই আমার মনে হয়, ঈদের আগে বাড়ি টাকা পাঠানো সমস্যা হবে না।”

তিনি বলেন, গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট চলছে।

“তবে এর কারণে কোনো বাংলাদেশি চাকরি হারিয়েছে বলে আমি কখনও শুনিনি।

“সংকটকালে কিছু সময়ের জন্য কাজ ছিল না। তবে সে সময় অনেক বিদেশি গ্রিস ছাড়ায় আবারও লোকের চাহিদা বেড়ে যায়।”

তিনি বলেন, গ্রিসে পোশাক খাতে বাংলাদেশিদের একটি বড় অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশিদের আড়াইশ পোশাক কারখানা রয়েছে সেখানে।

গ্রিসে এ খাতে অন্তত পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে।

“এবং এখন এ চাহিদা বাড়ছে। এ খাতের জন্য দক্ষ জনবল তারা কীভাবে পাবে? তাদের বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করতে হবে,” বলেন বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রেসিডেন্ট।