যুক্তরাজ্যে ভোটের লড়াইয়ে ১১ বাঙালি

২০১০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন রুশনারা আলী। এবার সে লড়াইয়ে যোগ হয়েছেন আরো ১০ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।

সৈয়দ নাহাস পাশাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 07:47 PM
Updated : 8 May 2015, 02:49 AM

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী হয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে সাতজন। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাট থেকে তিনজন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি  বৃহস্পতিবারের  ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজনই নারী, এর মধ্যে রুশনারা আলী এবং বঙ্গবন্ধুর নাতনী, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন।

লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অন্যরা হলেন- রূপা  আশা হক, মেরিনা আহমদ,  আনওয়ার বাবুল মিয়া, আলী আখলাকুল ও এমরান হোসাইন।

বর্তমান এমপি রুশনারা আলী লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে, টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন, রূপা হক ইলিং সেন্ট্রাল, মেরিনা আহমদ বেকেনহ্যাম, আনওয়ার ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিলড, আখলাকুল রায়গেইট অ্যান্ড বানস্টেড ও হোসাইন নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লড়ছেন।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে লন্ডনের বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহ্যাম আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মিনা রহমান এবং লিবডেম থেকে নর্দাম্পটন সাউথ আসনে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, লুটন সাউথ থেকে আশুক আহমদ এবং ওয়েলসের আর্ফন থেকে মোহাম্মদ সুলতান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মধ্যে অধিকাংশই লন্ডনের বিভিন্ন আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। লন্ডনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে লেবার দলীয় তিন নারী প্রার্থী রুশনারা, টিউলিপ ও রূপা হক শুধু বাঙালি কম্যুনিটিতে নয়, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর আলোচনার কেন্দ্রেও ছিলেন গত এক মাসজুড়ে।

লেবার পার্টির প্রার্থীরা

রুশনারা আলী
: বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে রুশনারা আলীর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কম্যুনিটির সদস্যরা। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যান রুশনারা।

সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রিধারী রুশনারা পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।

তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী রুশনারা আলী অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছেন ফিলসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্স (পিপিই) বিষয়ে। লেবার পার্টির হয়ে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক শ্যাডো মিনিস্টারের ভূমিকা পালন করেন।

গত সেপ্টেম্বরে ইরাকে সামরিক হামলায় সংসদে লেবার পার্টি সমর্থন দেওয়ায় রুশনারা শ্যাডো মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।  

তরুণ এই পার্লামেন্টারিয়ান বর্তমানে পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য এবং আপরাইজিং নামের একটি দাতব্য সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি তরুণদের নিয়ে কাজ করেন।

গত বছর সাড়ে ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন রুশনারা। তার বিপরীতে এবার বড় কোনো দল থেকে বাঙালি কোনো প্রার্থী নেই এই আসনে। তাই এবার আরো বেশি ভোটের ব্যবধানে তিনি জিততে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার ব্রিকলেন ও বাংলা টাউনে নির্বাচনী প্রচারণা চালান রুশনারা। বক্তব্য রাখেন ব্রিকলেন মসজিদে কমিউনিটি নেতাদের সমাবেশে।

টিউলিপ সিদ্দিক:
বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে  নির্বাচনে লড়ছেন। টিউলিপ মার্জিনাল আসনে থাকলেও নির্বাচনী প্রচারে তার পক্ষে ভালো সাড়া মিলেছে।

গত বছর মে মাসে কাউন্সিল নির্বাচনে এই আসনে আগের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে লেবার পার্টি। পার্লামেন্ট নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটলে টিউলিপ বড় ব্যবধানে লেবার পার্টির এই আসন ধরে রাখবেন বলে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী গ্লেন্ডা জ্যাকসন মাত্র ৪২  ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। মঙ্গলবার টিউলিপ সিদ্দিকের নির্বাচনী এলাকা হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নে গেলে সমর্থকদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দেখা গেছে। টিউলিপ সিদ্দিকও ভোটারদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

কিলবার্ন হাই রোডে স্থানীয় লেবার পার্টির অফিসের ভিতরে নির্বাচনী টিমের সদস্যদের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। ব্যস্ত এই সড়কে অফিসটি চোখে পড়ার মতো। টিউলিপের বিশাল ছবি ও পোস্টারে ঢাকা অফিসের সামনের এলাকা।

টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- কনজারভেটিভের সায়মন মারকাস, লিব ডেমের মাজিদ নওয়াজ ও ইউকেআইপির ম্যাগনাস নিলসেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ বলেন, “এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং। বর্তমান এমপি গ্লেন্ডা অনেক বিখ্যাত এবং পরিচিত একজন ব্যক্তি। সেই তুলনায় আমি একেবারেই নতুন।”

১৫ বছর বয়স থেকে হ্যাম্পস্ট্যাড অ্যান্ড কিলবার্নে বসবাস করছেন টিউলিপ। এই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে টিউলিপ বলেন,  ভোটের লড়াইয়ে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তিনি।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন।

টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হন।

২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ।

রূপা হক:
কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রূপা হক লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন  ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাকটন আসনে।

১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। গত সাধারণ নির্বাচনে ইলিং সেন্ট্রাল আসন থেকে কনজারভেটিভ প্রার্থী এঞ্জি ব্রের কাছে ৩ হাজার ৭১৬ ভোটে হেরেছিলেন লেবার পার্টির প্রার্থী।

তবে রূপা মনে করেন এবারের নির্বাচনে তিনি সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে জয়ী হতে পারবেন।

তিনি ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে তিনি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি।

মেরিনা আহমদ:
লন্ডনের বেকেনহাম আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেরিনা আহমদ, যিনি গত ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সদস্য। পার্টির বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া মেরিনা মাত্র ৬ মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্য আসেন।

ইউনিভার্সিটি অফ সারে থেকে ইংরেজি ও ইতিহাসে স্নাতক মেরিনা সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কেবিনেট অফিসে কাজ করছেন।

১৫ ও ১৬ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী মেরিনা ক্রাউন প্রসিকিউশন টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একটি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর এবং তার নিজ আসনের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।

মেরিনার এই আসন বরাবরই কনজারভেটিভ পার্টির একটি পাকা আসন হিসেবে পরিচিত।

আনওয়ার বাবুল মিয়া: লন্ডনের অদূরে ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনে লেবার পার্টির এই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রী গ্রান্ট শপ।

লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত বাবুল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এলাকার সকল শিশুদের জন্য একটি বাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে চাই এবং পেনশনাররা যাতে একটি মর্যাদাশীল জীবন পান সে লক্ষ্যেও কাজ করতে চাই।”

আনওয়ার বাবুল মিয়ার চেম্বার ‘হুজ হু ইন দ্য ল’ লিগ্যাল ডিরেক্টরির পাঁচশ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে। তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ব্যবসায়িক সংগঠন ইউকেবিসিসিআইর একজন পরিচালক।   

আলী আখলাকুল:
সারের রায়গেইট অ্যান্ড বানস্টেড আসনে লেবার পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আলী আখলাকুল।

২০১০ সালের নির্বাচনে এই আসনে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি হয়েছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির ক্রিসপিন ব্লান্ট। ওই বছর আসনটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী, আর তৃতীয় হয়েছিলেন লেবার দলের প্রার্থী রবার্ট হাল। এবার আসনটিতে লেবার পার্টির হয়ে লড়ছেন বাঙালি আখলাকুল। লেবার পার্টির ভোট বাড়ানোই হবে তার মূল চ্যালেঞ্জ।

লুটনের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী আখলাকুল জন্মলগ্ন থেকেই ওই শহরে বাস করছেন। লেখাপড়া করেছেন ডেনবিগ হাইস্কুলে। রেস্তোরাঁয় কাজ করাসহ হোটেল ম্যানজমেন্টের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার । ১৯৬০ সালে  লন্ডনে আসেন আখলাকুলের বাবা। পরিবারের সঙ্গেই তিনি লুটনে বেড়ে উঠেছেন।

এমরান হোসাইন:
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবশেষে মনোনয়ন পান এমরান হোসেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসনে লেবার পার্টি থেকে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করা এমরান এনএইচএস (জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা) ইংল্যান্ড শাখার ন্যাশনাল ডেলিভারি অফিসার। একইসঙ্গে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন রিজার্ভ সৈনিক।

ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া এমরানের বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে।

বয়সে তরুণ এমরান বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এমরানের আসনটি গত কয়েক দশক ধরে কনজারভেটিভ পার্টির দখলে রয়েছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির জেমস আর্বুথনট ৩২ হাজার ৭৫ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে আসনটির এমপি।

কনজারভেটিভ ও লিব ডেম প্রার্থীরা

মিনা রহমান
: কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাঙালি প্রার্থী মিনা রহমান লন্ডনের বার্কিং আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনটির বর্তমান এমপি লেবার পার্টির মার্গারেট হজ।

সিলেটের ছাতকে জন্ম নেওয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাসরত মিনা রহমান বর্তমানে একটি হাউজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক পদে কাজ করছেন।

রক্ষণশীল চিন্তাধারার কনজারভেটিভ পার্টির এই সদস্য ইলফোর্ড সাউথ কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ার এবং রেডব্রিজ কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন।

প্রিন্স সাদিক চৌধুরী
: নর্থহ্যাম্পটন সাউথ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটস মনোনীত প্রার্থী প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। তিনি নর্থহ্যাম্পটনশায়ার থেকে ২০০৭ সালে একমাত্র বাঙালি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন।

গত শতকের সত্তরের দশক থেকে নর্থহ্যাম্পটন এলাকায় বসবাস শুরু করে সাদিকের পরিবার, যিনি এখন স্থানীয় বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

ইউনিভার্সিটি অফ নর্থহ্যাম্পটনে লেখাপড়া করা সাদিক চৌধুরীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলীয় প্রার্থী ব্রায়ান বিনলি। এই আসনটি কনজারভেটিভ পার্টির একটি ‘নিরাপদ’ আসন হিসেবে পরিচিত।

আশুক আহমদ:
লুটন সাউথ আসনে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে লড়ছেন আশুক আহমদ।

১১ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে মা বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেয়ার পর থেকেই লুটনে বসবাস করছেন আশুক। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে কাজ করা আশুক আহমদ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে লিবারেল ডেমোক্রেটস দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

আশুকের জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। তিনি বেডফোর্ড লুটন থেকে উচ্চ শিক্ষায় ডিপ্লোমা এবং ডে মনফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এপ্লাইড সোস্যাল অ্যান্ড কমিউনিটিজ স্টাডিজে বিএ অনার্স করেন।

২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে এবং বিভিন্ন কাউন্সিলে কাজ করেছেন আশুক।  ২০০৯ সাল থেকে লুটনে সোস্যাল ল্যান্ডলর্ড (হাউজিং এসোসিয়েশন) কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আসনটি কনজারভেটিভ পার্টির দখলে ছিল। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে সেখানে জয় পায় লেবার পার্টির প্রার্থী। সেই থেকে আসনটি লেবারদের ‘নিরাপদ’ আসন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ সুলতান: ওয়েলসের আর্ফন আসনে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ সুলতান।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জন্ম নেওয়া সুলতান তরুণ বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তার শৈশব কেটেছে সুরমায়, দক্ষিণ সুরমার জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। পেশায় একজন সফল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সুলতান স্থানীয় বেনগোর সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর।

প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি বেনগোর এলাকায় বসবাস করছেন। ছয় সন্তানের জনক সুলতান ২৭ বছর ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। ব্যবসায়িক সফলতা এবং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আগে লেবার পার্টির দখলে থাকা এই আসনটি ২০১০ সালের নির্বাচনে জিতে নেয় ওয়েলস ন্যাশনালিস্ট পার্টি প্লেইড কিমরুর হাইউল উইলিয়ামস ওই নির্বাচনে লেবার দলের প্রার্থী আলুন পাউকে প্রায় দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী সারাহ গ্রিন মাত্র ৩ হাজার ৬৬৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন।