তবে এই বিক্ষোভে অংশ নিলে দ্বিতীয় কোনো সতর্ক বার্তা ছাড়াই ভিসা বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটির সরকার।
মালদ্বীপের হাভেরু অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রোববার ভোরে চার মুখোশধারীর হামলায় প্রবাসী বাংলাদেশি শাহিন মিয়া খুন হন। মালের সাউথ-ওয়েস্ট হারবার এলাকায় ‘লিয়ানু ক্যাফে’তে কাজ করতেন তিনি।
আর ‘আলিফ আলিফ আতোল থড্ডু’ দ্বীপ থেকে বিলাল নামে অন্য এক বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে মিনিভান নিউজ নামে মালদ্বীপের অন্য একটি ইন্টারনেট সংবাদ মাধ্যম।
স্থানীয় কাউন্সিলের সভাপতি হাসান ইব্রাহীমকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ২০-২৫ বছর বয়সী বিলালের লাশ উলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার গলায় একখণ্ড কাপড় জড়ানো ছিল।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে বিলালের ঘরে তার চাকুরিদাতা হোসেইন হাসান লাশটি দেখতে পান। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ সেখানে পৌঁছে। বিলালের সঙ্গে ওই বাসায় আরও তিনজন প্রবাসী থাকতেন।
দেশটির পুলিশ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মুখ খোলেনি, কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি।
এর ১০ মিনিটের মাথায় একই সড়কের আরেকটি দোকানের সামনে দ্বিতীয় হামলায় ছুরিকাহত হন আরেক বাংলাদেশি। এছাড়া কাছাকাছি সময়ে স্থানীয় মাছ বাজারের কাছে এক ভারতীয়কে ছুরি মারা হয়।
মালদ্বীপের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাভেরুকে বলেন, ওই তিন প্রবাসীর ওপর হামলার সঙ্গে শাহিন মিয়া হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগাযোগ তারা তদন্তে পাননি।
তবে শাহিনের ওপর হামলার আগের রাতে একদল যুবক ওই ক্যাফেতে গিয়ে বিনা পয়সায় কফি চাইলে কর্মীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। পরে ওই যুবকরা ওই ক্যাফেতে ভাংচুর চালায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।
মালদ্বীপ থেকে একাধিক বাংলাদেশি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রবাসীদের ওপর হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন।
হারুন অর রশীদ নামে প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় সেখানে বাংলাদেশিসহ অন্তত দশজন নিহত হয়েছেন। তবে অন্য কোনো সূত্রে এ তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
প্রবাসীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় সেখানে বসবাসরত বিদেশিদের নিরাপত্তার দাবিতে শুক্রবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সিএনএম নিউজ নামে মালদ্বীপের একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে মালদ্বীপের ইমিগ্রেশন কনট্রোলার মোহামেদ আনওয়ার এ বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ওয়ার্ক পারমিটের শর্ত অনুযায়ী তারা এ ধরনের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না। তারপরও কোনো বিদেশি কর্মী বিক্ষোভে অংশ নিলে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না।
বিক্ষোভে অংশ নিলে সতর্কবার্তা ছাড়াই ভিসা বাতিলের হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
তবে মালদ্বীপ হিউম্যান রাইটস কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ থোলাল বলেছেন, প্রবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক। মালদ্বীপের সংবিধান সবাইকে অধিকারের দাবিতে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার অধিকার দিয়েছে। অভিবাসন চুক্তির একটি ধারা সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না।
সিএনএম নিউজ লিখেছে, মালদ্বীপের আইন অনুসারে বিদেশি নাগরিকরা সে দেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মৌলিক অধিকার তাদের রয়েছে।
মালদ্বীপে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিপ্রচার বিভাগ বা মালের বাংলাদেশ হাই কমিশনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশ হাই কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএম নিউজ লিখেছে, প্রবাসীদের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উমর নাসের, পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুনিয়া মামুন ও পুলিশ কমিশনার হুসেইন ওয়াহেদকে জানানো হয়েছে।
বেসরকারি হিসাবে, তিন লাখ ১৪ হাজার মানুষের দেশ মালদ্বীপে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশি আছেন, যাদের একটি বড় অংশের বৈধ কাগজপত্র নেই। এদের অধিকাংশই কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে বা সেবা খাতে।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের অর্থ সংকটে থাকা মালদ্বীপ বিদেশে তাদের বেশ কয়েকটি মিশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকার মিশনও রয়েছে।