ব্রিটিশ নির্বাচনে বাঙালিরা

যুক্তরাজ্যে চার মাস পর অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে এবার তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন সাত বাংলাদেশি।

সৈয়দ নাহাস পাশাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2014, 06:50 PM
Updated : 29 Dec 2014, 02:32 AM

এদের মধ্যে পাঁচজন লেবার পার্টি থেকে, একজন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিব ডেম) পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।

লেবার পার্টির থেকে মনোনয়ন পাওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনই নারী, এর মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি রুশনারা আলী এবং বঙ্গবন্ধুর নাতনী, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন।

বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অন্যরা হলেন- রুপা হক, মেরিনা আহমেদ এবং আনওয়ার বাবুল মিয়া।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে লন্ডনের বার্কিং আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মিনা রহমান এবং লিব ডেম থেকে নর্দাম্পটন সাউথ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী।

২০১৫ সালের ৬ মে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর পরদিন ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

লেবার পার্টির প্রার্থীরা

রুশনারা আলী: বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন এবং বো আসনের বর্তমান এমপি রুশনারা আলীকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে লেবার পার্টি। রুশনারা ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যান।

সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রিধারী রুশনারা পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।

তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী রুশনারা আলী অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছেন ফিলসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্স (পিপিই) বিষয়ে। লেবার পার্টির হয়ে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক শ্যাডো মিনিস্টারের ভূমিকা পালন করেন।

গত সেপ্টেম্বরে ইরাকে সামরিক হামলায় সংসদে লেবার পার্টি সমর্থন দেওয়ায় রুশনারা শ্যাডো মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।   

তরুণ এই পার্লামেন্টারিয়ান বর্তমানে পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য এবং আপরাইজিং নামের একটি দাতব্য সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি তরুণদের নিয়ে কাজ করেন।

টিউলিপ সিদ্দিক: বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে মে মাসের ওই নির্বাচনে লড়বেন। শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন।

টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন আর্থরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হন।

২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় পার্টির সদস্যদের ভোটে টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা টিকেট পান।

রুপা হক: ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাকটন আসনে কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রুপা হক লেবার পার্টির মনোনয়ন পান ২০১৩ সালের নভেম্বরে।

তিনি ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে তিনি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেন নি।

১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রুপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। গত সাধারণ নির্বাচনে ইলিং সেন্ট্রাল আসন থেকে কনজারভেটিভ প্রার্থী এঞ্জি ব্রের কাছে ৩ হাজার ৭১৬ ভোটে হেরেছিলেন লেবার পার্টির প্রার্থী।

তবে রুপা মনে করেন এবারের নির্বাচনে তিনি সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে জয়ী হতে পারবেন।

মেরিনা আহমদ: লন্ডনের বেকেনহাম আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মেরিনা আহমদ, যিনি গত ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সদস্য। পার্টির বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া মেরিনা মাত্র ৬ মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্য আসেন।

ইউনিভার্সিটি অফ সারে থেকে ইংরেজি ও ইতিহাসে স্নাতক মেরিনা সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কেবিনেট অফিসে কাজ করছেন।

১৫ ও ১৬ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী মেরিনা ক্রাউন প্রসিকিউশন টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একটি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর এবং তার নিজ আসনের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।

মেরিনা যে আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন সেটি বরাবরই কনজারভেটিভ পার্টির একটি পাকা আসন হিসেবে পরিচিত।

আনওয়ার বাবুল মিয়া: লন্ডনের অদূরে ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনে লেবার পার্টির এই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রী গ্রান্ট শপ।

লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত বাবুল মিয়াকে চলতি বছরের মার্চ মাসে স্থানীয় লেবার পার্টির সদস্যরা পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য নির্বাচিত করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এলাকার সকল শিশুদের জন্য একটি বাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে চাই এবং পেনশনাররা যাতে একটি মর্যাদাশীল জীবন পান সে লক্ষ্যেও কাজ করতে চাই।”

আনওয়ার বাবুল মিয়ার চেম্বার ‘হুজ হু ইন দ্য ল’ লিগ্যাল ডিরেক্টরির পাঁচশ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে। তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ব্যবসায়িক সংগঠন ইউকেবিসিসিআই’র একজন পরিচালক।    

কনজারভেটিভ ও লিব ডেম প্রার্থীরা

মিনা রহমান: কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাঙালি প্রার্থী মিনা রহমান বার্কিং আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন। এই আসনটির বর্তমান এমপি লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত মার্গারেট হজ।

সিলেটের ছাতকে জন্ম নেওয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে বসবাসরত মিনা রহমান বর্তমানে একটি হাউজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক পদে কাজ করছেন।

রক্ষণশীল চিন্তাধারার কনজারভেটিভ পার্টির এই সদস্য ইলফোর্ড সাউথ কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ার এবং রেডব্রিজ কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন।

প্রিন্স সাদিক চৌধুরী: নর্থহ্যাম্পটন সাউথ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস মনোনীত প্রার্থী প্রিন্স সাদিক চৌধুরী নর্থহ্যাম্পটনশায়ার থেকে ২০০৭ সালে একমাত্র বাঙালি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন।

গত শতকের সত্তরের দশক থেকে নর্থহ্যাম্পটন এলাকায় বসবাস শুরু করে সাদিকের পরিবার, যিনি এখন স্থানীয় বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

ইউনিভার্সিটি অফ নর্থহ্যাম্পটনে লেখাপড়া করা সাদিক চৌধুরী সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ দলীয় প্রার্থী ব্রায়ান বিনলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সাদিকের আসনটি কনজারভেটিভ পার্টির একটি নিরাপদ আসন।