মেরুদণ্ডে আঘাত নিয়ে প্রবাসে ধুঁকেধুঁকে বেঁচে থাকা

ভাগ্যের চাকা ঘোরাবেন বলে বহু আশা করে আবুধাবি এসেছিলেন দীপক চন্দ্র নাথ।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2017, 11:35 AM
Updated : 26 Sept 2017, 11:35 AM

দীপকের (৩৭) বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট থানার ভাটইয়া গ্রামে। বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা ও মানসিক প্রতিবন্ধী এক ছেলেসহ তিন সন্তান নিয়ে স্ত্রী আছেন।

তিনি জানান, ২০১২ সালে ভিটা-বাড়ি বন্ধক রেখে আদমবেপারীর হাতে প্রায় তিন লাখ টাকা তুলে দিয়ে আমিরাতের ভিসা নিয়ে পাড়ি জমান পেট্রোডলারের দেশ আমিরাতে।

পরিবারের মুখে খাবার জোগাতে দূর প্রবাসে এসে দীপকের ভাগ্য তো ঘুরলোই না বরং কর্মস্থলে ক্রেইন দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পান। আর তা থেকে ডান পায়ে অবশ হেয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসার জন্য তাকে দেশে পাঠানো হয়। দেশ থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ফেরার পর আবার কাজে যোগ দেন।

এর কিছুদিন পর আবার কর্মস্থলে ভারি কাজ করতে গিয়ে আবার কোমরে ব্যথা অনুভব করেন দীপক। তখন চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হয় অস্ত্রোপচার । কিন্তু দীপকের দাবি, ডান পায়ের বদলে ভুলক্রমে বাম পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে পরেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য দীপক।

পঙ্গুত্বের কারণে তার চাকরি নেই, বেতন নেই, ধার-দেনা করে জীবন চলছে, আর সাথে বয়ে বেড়াচ্ছেন তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা।

দীপক জানান, পুত্রশোক ও ভবিষ্যৎ চিন্তায় মারা গেছেন তার বৃদ্ধা মা। আবুধাবি আসার আগে সাড়ে আটশ’ দিরহাম বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখানে তার প্রকৃত বেতন ধরা হয় সাড়ে ছয়শ’। এ বেতনে না মেটে সংসারের খরচ, না যায় বাড়তি অভিবাসন ব্যয়ের দেনা মেটানো।

বিদেশে পাড়ি জমানোর এক বছরের মাথাতেই তার ওপর নেমে আসে এ বিপর্যয়। ভুল চিকিৎসার কারণে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে তার কর্মস্থল, দূতাবাস ও আদালতে ঘুরেও কোন সাড়া পাননি হতভাগা দীপক।

অশ্রুসজল কণ্ঠে দীপক বলেন, “বড় কোম্পানি হওয়ায় আমি বিচার পাইতেছি না। আমার বউ, বাইচ্চ্যা কাইচ্চ্যা, বুড়া বাপ কত কষ্ট কইত্তেছে। কারো ক্যাপাসিটি নাই এক কেজি চাইল আইনবার। দুই বছর ধরি কোম্পানি কাজও দেয় না, ক্ষতিপূরণও দেয় না, আমি কই যামু?”

দীপক তার পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ চান।