প্রবাসী ছাত্রের লাশ দেশে পাঠাতে অবশেষে তহবিল

সরকারি সাহায্যের কোন ‘সুযোগ না থাকায়’ অবশেষে সিডনি প্রবাসী এক ছাত্রের লাশ দেশে পাঠাতে তহবিল তৈরি করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীরা।

নাইম আবদুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2017, 11:22 AM
Updated : 23 August 2017, 11:22 AM

মারা যাওয়া ছাত্রের নাম মোহাম্মদ কিবরিয়া (২৫)। বাংলাদেশে তার বাড়ি চাঁদপুরে। সেখানে তার মা রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সিডনির রকডেল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে কিবরিয়াকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি তার পরিচিত অন্যান্য বাংলাদেশি ছাত্রদের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন।

কিবরিয়ার বন্ধুরা জানান, কিবরিয়া ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০১১ সালে সিডনিতে পড়তে আসে। তার বাবা বেঁচে নেই বলে প্রবাসে থাকার খরচ চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। এসব কারণে নিজেকে অনেক কিছু থেকে সে গুটিয়ে রাখতো।

তারা আরও জানান, গত কয়েক বছরের প্রবাস জীবনে কিবরিয়া অন্যদের মতোই একই সাথে পড়ালেখা ও বিভিন্ন পার্টটাইম কাজ করে যাচ্ছিলো। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মানসিক চাপ ও নানা অনাকাঙ্খিত সমস্যা তার মানসিক শক্তিকে দিন দিন দুর্বল করে দিচ্ছিল যা তার বন্ধুরাও বুঝে উঠতে পারেননি।

অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ময়নাতদন্ত ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য কিবরিয়ার লাশ নিয়ে গেছেন। এদিকে কিবরিয়ার বন্ধুরা মিলে তার লাশ দেশে পাঠানোর জন্য ফেইসবুক ও স্থানীয় অনলাইন পত্রিকাগুলোতে আবেদন জানান।

এ আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেকে এগিয়ে আসতে চাইলেও অনেকে বলেন যে, এ ব্যাপারে সবার আগে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও বাংলাদেশ সরকারকে জানানো উচিত। প্রবাসীর লাশ দেশে পাঠাতে আর্থিক সহায়তা তাদেরই দেওয়ার কথা।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ফেইসবুক পেইজ থেকে একটি লেখা পোস্ট করেন তারা। সেখানে লেখা ছিল, “আমার এই পোস্টটি প্রবাসী ভাইবোনেরা দয়া করে শেয়ার করবেন। যদিও খুব সুখকর নয়, একটি বিষয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখতে চাই- বর্তমান সরকার বেশ কিছুদিন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সব প্রবাসীর পরিবার পরিজনের সামর্থ্য নেই কোন প্রবাসীর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার, সরকার সেই মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং সেই সাথে দাফনের খরচও দেওয়া হয়। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, আজকে যেমন জার্মানি থেকে একজনের সহকর্মী একটু আগে ফোন করেছিলেন। যদিও বিষয়টি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে ওয়েজ আরনার্স বোর্ডের এখতিয়ারভুক্ত। প্রথমে আপনারা বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে যোগাযোগ করবেন এবং আশানারূপ সাড়া না পেলে আমাকে sm@mofa.gov.bd এ ঠিকানায় ইমেইল করে জানাবেন।”

আমরা প্রথমে হাই কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “মৃত কিবরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওয়েজ আরনার্স বোর্ডের সদস্য না হওয়ায় তাদের পক্ষে কোন সহায়তা প্রদানের এক্তিয়ার নেই।”

পরে আমরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে ই-মেইল করি। তিনি পাল্টা ই-মেইলে ইংরেজিতে যা লিখেন তা বাংলা করলে দাঁড়ায়, “দুঃখিত, এ সুযোগটি কেবল ওয়েজ আরনার্স বোর্ডের সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য। তিনি যদি ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে তার ইনস্যুরেন্স থাকা উচিৎ ছিল। যদি সেখানে বিমান সেবার সুযোগ থাকে তাহলে আমি সহযোগিতা করতে পারবো।”

আমাদের প্রবাসীদের মুখের ভাষা আটকে যায়। একজন ওয়েজ আরনার্স বোর্ডের সদস্য প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজনরা কখনই সরকারের কাছে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য অর্থ সাহায্য চাইবে না। একজন প্রবাসী ছাত্র মোটা অঙ্কের প্রিমিয়ামের কারণে এখানে আসার পর ইনস্যুরেন্স বন্ধ করতে বাধ্য হয়। একথা আমাদের সবার জানা।

সিডনিতে বাংলাদেশের মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপি এলে এখানকার প্রবাসী ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের এয়ারপোর্টে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তাদের বক্তৃতা শোনার জন্য হোটেলে নিজেরা নৈশভোজের আয়োজন করেন। আমাদের এখানে আমজনতার কি তাদের অভ্যর্থনা জানানোর কোন দরকার আছে? আমাদের আশঙ্কা ভবিষ্যতে সিডনিতে দেশ থেকে মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপি এলে কিছু সেলফিবাজ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে পাওয়া যাবে না।

আমরা এবার কিবরিয়ার লাশ দেশে পাঠানোর জন্য নিজেদের মধ্যেই ফান্ড সংগ্রহ শুরু করেছি। এর আগেও অন্যান্য প্রবাসীর লাশের জন্যও এমনটা করতে হয়েছিলো আমাদের।

দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি যে কেউ এ ফান্ডে অর্থ পাঠাতে পারেন। অ্যাকাউন্ট নাম: শাপলা শালুক লায়ন ক্লাব। কমনওয়েলথ ব্যাংক। বিএসবি: ০৬২২৫২, অ্যাকাউন্ট নম্বর: ১০১৭৫৪৭১

আমাদের কাছে ফোনের কলার আইডি লুকিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর জানতে চেয়েছেন। ভালো কাজের জন্য ভালো মানুষের অভাব হয় না।      

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক