হজ: সৌদি গিয়েও ভোগান্তির অভিযোগ

একের পর এক ফ্লাইট বাতিলে বিড়ম্বনার শিকার হয়ে দেশ ছাড়ার পর সৌদি আরবে গিয়েও হজ এজেন্সিগুলোর অব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়ার অভিযোগ করেছেন হজ পালনেচ্ছুরা।

মো. শফি উল্লাহ, সৌদি আরব প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 02:54 PM
Updated : 22 August 2017, 03:40 PM

হজ এজেন্সিগুলো আবাসন ও খাবারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত সেবা না দিয়ে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

ফেনী থেকে আসা হজযাত্রী নুর নবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এজেন্সি আমাদের হারাম শরিফের কাছে রুম দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে দুই কিলোমিটার দূরে।

“এছাড়া এক রুমে তিনজন করে থাকার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও আছি ছয়জন করে। ভালো খাবারের কথা থাকলেও নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়।”

এছাড়া নিম্নমানের লাগেজ কেনা, মক্কা ও মদিনায় দেরিতে বাড়ি ভাড়া করা, চুক্তিহীন বাড়িতে গাদাগাদি করে হজযাত্রীদের রাখা, দেরিতে মোয়াল্লেম নেওয়া, হজযাত্রীদের খোঁজ-খবর না নেওয়া ও যথাসময়ে বিমানের টিকিট সংগ্রহ না করার এসেছে অনেক এজেন্সির বিরুদ্ধে।

মদিনায় অবস্থানরত কয়েকজন হজযাত্রী অভিযোগ করেন, তাদের রুমের এসি কাজ করে না। অনেক জায়গায় কাজ করলেও থাকার কক্ষ ঠাণ্ডা হচ্ছে না।

শামশুল আলম চৌধুরী নামে সরকারীভাবে আগত এক হজযাত্রী বলেন, “রুম ও টয়লেটের মধ্যে ওপর থেকে পানি পরে।  এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি।”

মদিনা হজ মিশনে কর্মরত মৌসুমী হজ কাউন্সেলর জহির আহমেদ বলেন, “ অনেক হজযাত্রী হজ মিশনে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে । তবে লিখিত ভাবে ৩ জন অভিযোগ করেছেন।” 

এ বিষয়ে মক্কায় হজ কাউন্সিলর মো. আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “হাজীদের যেকোনো অভিযোগ, সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কমিটি করে দিয়েছি । তারা কোনও অভিযোগ, সমস্যা পেলে তা সমাধানের চেষ্টা করেন।” 

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)- এর সহ সভাপতি ইয়াকুব সারাফাত বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত হজযাত্রীদের অভিযোগ পাইনি। আমরা হজযাত্রীদের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে হজের ব্যবস্থা করে থাকি । অনেক সময় কিছু টাকা বাকি রেখেও হজের ব্যবস্থা করি।” 

তবে মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর বিলম্বে চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ডি গ্রেডে মোয়াল্লেম পেতে দেরি হয় এবং কিছু জায়গায় সি গ্রেডে মোয়াল্লেম নেয়া হয়। এজন্য অতিরিক্ত টাকাও দিতে হয়।”

সৌদি আরব হজ মন্ত্রণালয় ডি গ্রেডে দুই মাস আগে বিভিন্ন গ্রেডের মোয়াল্লেমদের ফি বৃদ্ধি করে প্রথম এ গ্রেডে ৩৯৫০ রিয়াল, বি গ্রেডে ১৯০০ রিয়াল, সি গ্রেডে ১৫০০ রিয়াল ও ডি গ্রেডে ৭২০ রিয়াল নির্ধারণ করে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস থেকে হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ করতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হলেও এজেন্সি মালিকরা তা আমলে নেননি। তারা সরকারি সংস্থাগুলোর নির্দেশ না মানায় এবং নিজেদের ‘ইচ্ছা মতো’ কাজ করায় ভিসা ইস্যু ও হজযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

গত জুলাইয়ের শেষে হজযাত্রা শুরু হওয়ার পর যাত্রী সঙ্কটে পড়ে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।  

ওই সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫-১৬ সালে যারা হজ পালন করে এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল দিতে বলে সৌদি আরব। আর এই নিয়েই তৈরি হয় জটিলতা।

এই অর্থ দিতে আপত্তি তোলেন হজ এজেন্সির মালিকরা। কোনও কোনও এজেন্সির অধীনে থাকা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হজযাত্রীর নামে ভিসা ইস্যু হলেও  সবার ভিসা না হওয়া পর্যন্ত ভিসাপ্রাপ্তদের সৌদি পাঠায়নি এজেন্সিগুলো। ফলে বিমানের ফ্লাইট বাতিল করতে হয়।

এছাড়া ১০ জুনের মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়িভাড়া করার কথা থাকলেও সময়মতো বাড়িভাড়া করে মাত্র ১০ থেকে ১২টি এজেন্সি। অন্য এজেন্সিগুলোকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বাড়ি ভাড়া করতে চিঠি দেয়।

অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশি ৯১টি এজেন্সি মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তি করেনি। ফলে এসব এজেন্সির ১৮ হাজার ৪০০ হজযাত্রীর বাড়িভাড়া না হওয়ায় ভিসা ইস্যু হতে দেরি ও ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়।

তবে হজে যাওয়ার পরও মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর দেরিতে চুক্তি, সময় মতো বাড়িভাড়া না করা, ভিসা ছাড় ও মোফা (হজ ভিসা) পাঠাতে দেরি হওয়া বর্তমান ভোগান্তি কারণ।

বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৬৩৫টি এজেন্সি। তাদের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ।

সৌদি হজ সংক্রান্ত শুরা কমিটির সদস্য ওমর সিরাজ ওমর আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ১৫টি বেসরকারি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশন ও সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ। সতর্ক করা হয়েছে আরও ২০টি বেসরকারি হজ এজেন্সিকে।”

তবে ওই এজেন্সিগুলোর নাম এবং কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা চলতি বছরের হজ শেষে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর নিয়ম থাকায় এখনই নাম প্রকাশ করতে অপারগতার কথা জানিয়েছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ।

হজ প্রশাসনিক দলের দলনেতা এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন,  “হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সুযোগ সুবিধা তদারকির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। হজ মিশন কোনও অভিযোগ পেলে সরেজমিন গিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। যেসব এজেন্সির গাফলতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের ‘কালো তালিকা’ ভুক্ত করে হজের পরে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন