প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার একদিন

এই ভ্রমণটা আসলে আলাদা রকমই ছিল। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোলে হারিয়ে যাওয়ার একটা দিন ছিল সেদিন।

সাদ বিন ইসলাম, চীন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2017, 04:09 AM
Updated : 20 August 2017, 04:09 AM

ভ্রমণের জন্য নির্ধারিত বাহন হিসেবে ছিল বাস। আর দশটা ভ্রমণের মতোই গানের কলি, হই-হল্লা, সেলফি তোলা, জোকস- কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। কিছু প্রতিভাধর বন্ধুদের ফেরিওয়ালা, তেলাপোকার ঔষধ আর মলম বিক্রেতার অভিনয় দেখে হেসে  গড়াগড়ি খায়নি, এমন কেউ নাই। একই ছাদের নিচে পুরো বাস একটা উচ্ছ্বল পরিবারে পরিণত হয়ে উঠছিলো।

এবার বলি, কী কী দেখলাম ‘চিশুই’তে। প্রথমেই বাসে করে চলে গেলাম চিশুই শহরের প্রধান পর্যটন অফিসের সামনে। ওখানে থেকে গাইড কুংফু দেখাতে নিয়ে গেল। সবাইকে কুংফু’র পোশাকও দেওয়া হল। বলা বাহুল্য, ১৫০ জন মানুষ যখন কুংফু পোশাক পরে লাইনে দাঁড়িয়েছে, সেটা দেখার মতো ব্যাপারই হয়ে উঠেছিল। কুংফু মাস্টার কুংফুর কিছু প্রধান কৌশল শেখালো আমাদের।

কুংফু শেষে আমরা বাসে করে চলে গেলাম ঐতিহ্যবাহী ভিনেগার বেভারেজ ওয়ার্কশপে। চাইনিজদের এই ভিনেগার, হোয়াইট ওয়াইনের পেছনে রয়েছে সহস্র বছরের ইতিহাস।

সারি সারি সাজানো হাজার হাজার মটকাতে তাদের ভিনেগার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। নুন্যতম চার-পাঁচ বছরের আগে খোলা হবে না মটকার ঢাকনা। তারপরে রয়েছে প্রক্রিয়াকরণের অনেক জটিল ধাপ। না গেলাম সেদিকে আর।

ভিনেগার ওয়ার্কশপ দেখা, দলবদ্ধ হয়ে ছবি ওঠানো, সেলফি পর্ব শেষে আবার বাসে করে চিশুই পর্যটন অফিসে ফিরলাম। সেখানে আমাদের জন্যে আয়োজন করা হয়েছে দুপুরের খাবার।

ব্যুফে সার্ভিসের খাওয়া-দাওয়া। কুংফু অনুশীলন আর কড়া রোদে ভিনেগার ওয়ার্কশপ ঘুরে সবাই মোটামুটি ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই বাঘের মত খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। দৃশ্যটা ক্যাপচার করার সময় পাইনি, কারণ নিজেও ওই কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার বাসে ফেরত।

এরপরের আয়োজন ছিল আরও উত্তেজনাপূর্ণ। বাস আমাদের নিয়ে এলো জুরাসিক প্লান্টে। সেখান থেকে সাইটসিয়িং গাড়িতে করে সোজা বনের ভেতরে। এ যেন অন্য এক জগতে এসে পড়লাম! এত সুন্দর বনের মাঝখানে রাস্তা করা পর্যটকদের জন্যে।

একটু পরে পরেই দেখি বিশাল আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির কৃত্তিম ডাইনোসর রাখা। ওরা হা করে, নড়েচড়ে, ঘাড় ঘোরায়, চোখের পাতাও ফেলে। অবাক করা ব্যাপার! সাইটসিয়িং গাড়ি থেকে নেমে খানিকক্ষণ পাহাড়ে উঠলাম সবাই মিলে। এই পর্ব শেষে আবারও সেই সাইটসিয়িং গাড়িতে করে ফেরত এলাম বাসে।

এবার সর্বশেষ আয়োজন। বিশ্বখ্যাত হেরিটেজ দানশিয়া মাউন্টেন। এই জায়গার কথা লিখতে গেলে কয়েক পাতা হয়ে যাবে। এক কথায় একখণ্ড ভূ-স্বর্গ। বিশাল বন আর পাহাড়। মাঝখানে পর্যটকদের জন্যে রাস্তা করা।

রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। আর দুই পাশ দিয়ে বড় বড় পাহাড়ী পাথর আর অসংখ্য ঝরনা বয়ে চলছে। রিমঝিম ঝরনার শব্দ আর ছিটকে ছিটকে গায়ে এসে পড়া সেই পানির শীতল পরশ। অন্যরকম অনুভূতি! দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।

এই পর্বের আরেকটা উত্তেজনাময় আয়োজন ছিল পাহাড়ে চড়ার প্রতিযোগিতা। পূর্ব নির্ধারিত একটি চূড়ায় পাহাড় বেয়ে পৌঁছানো প্রথম ৩৩ জনের জন্যে ছিল পুরস্কার।

দেখতে দেখতে সবগুলো আয়োজনই শেষ হয়ে গেল। গাইডের নেতৃত্বে ফিরে এলাম বাসে। পর্যটক কোম্পানির লোকজন আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে পুনরায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিল।

ফিরে আসার পালা। প্রত্যকেই বেশ ক্লান্ত ছিলাম, কিন্তু কেউই তেমন ঘুমালাম না বাসে। গল্প-হাসি আর কথা বলতে বলতে পথটা ফুরিয়ে গেলো। আর এভাবেই শেষ হল জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটা আনন্দভ্রমণ।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল: shadbinislam@yahoo.com

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!