মরুভূমির ধুলাবালির মাঝে গড়ে উঠছে কৃষিখামার। এমন কৃষি-খামারে সবজি ফলাচ্ছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আব্দুল মতলব ও তার ১৭ জন সহযোগী। তাদের হাত ধরে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
মদিনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলমাসিহ নামক স্থানে মরুভূমির মাঝে একটি কৃষিখামার গড়ে তুলেছেন তারা। একে আরবি ভাষায় বলে ‘মাজরা’। ১৮০ বিঘা জমির এই কৃষিখামার ইজারা নিয়েছেন বাংলাদেশি চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মির্জাখিল কুতুবপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল মতলব।
তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি খামারটি চালাচ্ছেন। মাসিক ভাড়া ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার রিয়াল। বছরে বছরে বেড়ে এখন তা হয়েছে ১৫ হাজার রিয়াল।
চারদিকে ধু ধু মরুভূমি। এর মাঝে এই খামারটি চলছে মূলত জেনারেটর ও গভীর নলকূপের সহায়তায়। বর্তমানে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনও কখনও তা ৪৫-৫০ ছাড়িয়ে যায়।
মতলব আরও জানান, এখানে ফসল উৎপাদন ভালো হয়। তবে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। বীজ আনতে হয় বাইরের দেশ থেকে। প্রতি কেজি বীজ আনতে বাংলাদেশি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।
বর্তমানে এই কৃষি খামারে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা সবাই বাংলাদেশি। তারা শ্রমিক হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করেন । চাষিরা জমি তৈরি করা থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মরত চাষিরা জানান, গড়ে তাদের মাসিক আয় থাকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার রিয়াল। উদ্যোক্তা পান বার্ষিক ৫০-৬০ হাজার রিয়াল। এর থেকে ভাড়া, বীজ, সার, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকে। মোটের ওপর উদ্যোক্তা ও চাষিরা দেহের শ্রমে-ঘামে যা আয় করছেন, তাতে তারা সন্তুষ্ট।
খামারে উৎপন্ন শাক-সবজি স্থানীয় শহরে নিয়ে পাইকারি দামে বেচতে হয়। ট্রাক নিয়ে পাইকারও আসে খামারে। বাংলাদেশি পাইকারও রয়েছেন। বিভিন্ন খামার থেকে শাক-সবজি কিনে বড় শহর জেদ্দা, মক্কা বা রিয়াদে সরবরাহ করেন তিনি। ভালো লাভ থাকে, আবার লোকসানও হয় মাঝে মধ্যে।
প্রবাস জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে অনেকে বেড়াতে যান এসব কৃষি-খামারে। অনেকে বন্ধু-বান্ধবসহ সপরিবারে বনভোজনের আয়োজন করেন। তারা খেতের আলপথে হেঁটে, মরিচ-শিম-করল্লা আর ঝুলে থাকা লাউয়ের গায়ে আলতো পরশ বুলিয়ে, গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়ার শৈশব-স্মৃতি তাড়া করে অনেককে।
বাংলাদেশের লাখো মানুষ মরুর দেশ সৌদি আরবে কর্মরত। আর তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মরুর বুকেও সবুজ ফসল ফলাচ্ছেন প্রবাসী ওই বাংলাদেশিরা। প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশিদের কৃষি সাফল্য-সুনাম কুঁড়িয়েছে সর্বত্র।
বর্তমানে ৫৭ বছর বয়সী আব্দুল মতলব দেশেও একজন কৃষক ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে সৌদি আরবে এসেছিলেন তিনি। এখানেও প্রায় ৩৪ বছর হলো। আব্দুল মতলব তার দেশের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা, নিজস্ব বুদ্ধি ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আরবের মরুভূমিকে কৃষি খামার করে চলেছেন।
অনাবাদি, পতিত, বালি-কাঁকর মেশানো যেমন মাটিই হোক, অথবা আবাদি ভূমির ব্যবস্থা না থাকলেও জৈব উপাদান ব্যবহার করে তাতে ফল, ফুল, সবজি ফলিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন একজন বাংলাদেশি।
চারা রোপণ করার পর থেকে শিম চার মাস, টমেটো ৯০ দিন ও বাকি সবজি ৪৫ দিনের ভেতরে বাজারে বিক্রি করা যায়। এই বাগান থেকে মদিনা, জেদ্দা, রিয়াদসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় সবজি রপ্তানি করা হয়।
অভাব ছিল মতলবের নিত্যসঙ্গী। দুই মেয়ে ও চার ছেলের সংসারে খাবার জোটাতে বাংলাদেশ থেকে ১৯৮৩ সালে কাজের সন্ধানে ওমরাহ ভিসায় এসেছিলেন সৌদি আরবে । পরে ১৯৮৬ সালে নতুন ভিসা কিনে আবার সৌদি আসেন। সংকল্প ছিল তার। মদিনায় কফিলের (নিয়োগকর্তা) কাছে জমি বন্ধক নিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |