স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ সম্মেলনে যোগদানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
“দারিদ্র্য নির্মূল এবং পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা” প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে টেকসই উন্নয়ন ও এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক জাতিসংঘের ‘হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ)’ এর কার্যক্রম গত ১০ জুলাই শুরু হয়ে বুধবার শেষ হয়।
বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূরএলাহী মিনার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন পরিক্রমা কখনোই থেমে যাবে না। রাজনৈতিক অঙ্গিকার হিসেবেই বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা এসডিজি বাস্তবায়িত হবার ক্ষেত্র সুগম হয়েছে।”
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে বিভিন্ন তথ্যের ব্যাপারে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ পাচারের কোনো প্রয়োজন হবে না। ইচ্ছা করলেই তারা যে কোনো দেশে যে কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিদেশিরা যেমন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছেন, একই প্রক্রিয়া রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্যেও।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সরকার আইন ঢেলে সাজিয়েছে। তাই আগে অর্থ পাচারের সুযোগ থাকলেও, এখন আর তেমন বেআইনী পথে যাবার প্রয়োজন হবে না।”
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পের বিপরীতে ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়ে যারা প্রতারণা করেছেন, তাদের বিচার শুরু হয়েছে। কেউই রেহাই পাবে না।”
“সামনের বছরের শেষে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট জয়ী হতে না পারলে এসডিজি’র চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির এ ধারা থমকে দাঁড়াবে কিনা”-এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এসডিজির ১৭টি অভিষ্টের প্রায় সবগুলোকেই বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশে পরিণত করা হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই বাংলাদেশের মানুষ সামনের নির্বাচনেও তাদের সুচিন্তিত মতামতের সঠিক প্রতিফলনই ঘটাবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.আব্দুল করিম বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচটি ভিশন- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, ২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত হওয়া, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত করা এবং ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিরাপদ ব-দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রমকে মূলত: এসডিজি বাস্তবায়নের পথে বড় একটি সহায়ক বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “২০১৫ সালে এমডিজি বাস্তবায়ন শেষে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জন্য এসডিজি প্রণয়ন করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমডিজি বাস্তবায়নে তার সরকারের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতিসংঘ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। সরকার এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নের লক্ষে একজন ‘এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী’ নিয়োগ দিয়েছে যা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই।”
ভিএনআর ও সাধারণ আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ ছিল আটটি সাইড ইভেন্টের আয়োজক। এসকল সাইড ইভেন্টে সহ-আয়োজক ছিল জার্মানি, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ভিয়েতনাম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইথিওপিয়া, ঘানা, এস্তোনিয়া, কাজাখিস্তান, কানাডা, নেদারল্যান্ডস্, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এইচএলপিএফ-এর আরও ১৫টি সাইড ইভেন্টে অংশ নেয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ১০ দিনব্যাপী এইচএলপিএফ-এর এই অধিবেশনের সার্বিক সমন্বয় করেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের সাথে আরও অংশ নেন পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনোমিকস ডিভিশনের সদস্য শামসুল আলম, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জিআইইউ-এর মহাপরিচালক আবদুল হালিম।