তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি যে চোরাবালিতে পড়েছে সমাজব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলবে এবং ভূমিধসের মতোই আমরা ‘সামাজিক ধসে’র মুখোমুখি হবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপি এবং হেফাজতে ইসলামের সাথে আওয়ামী লীগের এ ‘বোঝাপড়া’র মধ্যে কোনও পার্থক্য করছেন না কানাডায় বসবাসরত এসব বাংলাদেশিরা।
রোববার ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশ’ নিয়ে কানাডার টরন্টোর মেইন স্ট্রিট এলাকার হোপ ইউনাইটেড চার্চের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রবাসীরা তাদের এসব আশঙ্কার কথা জানান।
কানাডার বাংলাদেশিদের সংগঠন প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক ইনিশিয়েটিভ (পিডিআই), ওই আয়োজন করে।
গোলটেবিলে উপস্থিত ৬০ জন প্রবাসীর মধ্যে ২০ জন আলোচনায় অংশ নেন। তাদের আলোচনায় সমসাময়িক বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র উঠে আসে।
আজিজুল মালিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে সঞ্চালক ছিলেন পিডিআইয়ের সমন্বয়ক মাহবুব আলম।
সাড়ে তিনঘণ্টা স্থায়ী এ গোলটেবিল আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর আত্নস্বীকৃত খুনি কানাডায় বসবাসরত নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে দিতে দেশটির সরকারের কাছে লেখা একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন উপস্থিত প্রবাসীরা।
ওই স্মারকলিপিটি পরে কানাডার সংসদ সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে সংস্কৃতিকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, পরিবেশবিদ, ব্যাংকার, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নানা শ্রেণি-পেশার ও রাজনৈতিক মতার্দশের প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, তাদের বার্তাআমলে নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবংভবিষ্যত প্রজন্মকে একটিস্থিতিশীল, নিরাপদ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দিক-নির্দেশনা দিবেন।
গোলটেবিল আলোচনায় পিডিআইয়ের যুগ্ম সমন্বয়ক বিদ্যুৎ রঞ্জন দে অভিষেক বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে কোনও কিছুই ঠিকঠাক চলছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনীতিতে ধর্ম ঢুকে গেছে, তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে আর নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে।
“স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এসেও আমাদের অর্জন খুব সামান্য। সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে এবং কালোটাকায় অর্থনীতি ছেয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “পিডিআই চায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আরও সত্যিকার গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করুক।”
“ভূমিধসের মতোই আমরা সামাজিক ধসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বছরের পর বছর অগণতান্ত্রিকতা চর্চার ফলে।”
বক্তব্যের সপক্ষে পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “ দেশের ৯৫ ভাগ সম্পদের মালিক মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ। আর নানা সময়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন।”
“লুটতরাজ সত্বেও সরকার নতুন করে ২ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বরাদ্দ করেছে, যা আরও দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিবে।”
এরশাদ আমলের বিভিন্ন আন্দোলনের উদাহরণ টেনে সাবেক এ ডাকসু নেতা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি চোরাবালিতে পড়েছে। আমাদের এর থেকে উদ্ধার পেতে হবে।”
গোলটেবিল আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস মিয়া বলেন, “বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। আমরা ৭২’-এর সংবিধান থেকেও দূরে সরে গেছি।”
এসময় বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই তার বক্তব্যের সাথে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়েন।
তিনি বলেন, “একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সরকারি বা বিরোধীদলে দেখতে চাই আমরা।”
সাংস্কৃতিক কর্মী রেজা অনিরুদ্ধ বলেন, “দৃশ্যতই আওয়ামী লীগ সব ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করছে। আর তাই হেফাজতের সাথে সমঝোতা।”
তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, “বিএনপি জামায়াতের সাথে এবং আওয়ামী লীগ হেফাজতের সাথে, তাহলে পার্থক্য কী থাকলো?”
গোলটেবিল বৈঠকে কাজী জহির উদ্দিন, ফারজানা আজিম শিউলি, সৌমেন সাহা, অরুনেন্দু ভৌমিক, নিরঞ্জন রায়, ফেরদৌস আজফার আহমেদ, সোলায়মান অতুল রবিন, একে আহমেদ কামাল, ফাইজুল করিম, শিবু চৌধুরী, ননী গোপাল দেবনাথ এবং ওমর হায়াত আলোচনা করেন।