পেরু থেকে ফিরেছি অনেকদিন হয়ে গেল। সারাক্ষণ মাথায় ঘুরছে কতগুলো শব্দ- ইনকা, কেচুয়া, চিচা, কনকুবাই, পাচামামা, কুচকো, টেরাস ইরিগেশন, আরও কত কি!
আজ থেকে প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে পনেরশ’ শতাব্দী (১৪৩৮ - ১৫৭২) থেকে ষোলশ’ শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত অঞ্চলে উরাবাম্বা নদীর উপত্যকায় আধুনিক কলম্বিয়া, এল সালভাদর, পেরু, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা এবং চিলি পর্যন্ত এ সভ্যতার ও সাম্রাজ্যের আবির্ভাব ঘটেছিল।
পাহাড় আর পাহাড়, কখন বা সরু ঝাউ গাছের নিরব কান্না। নদীর দুই পাশে পাহাড়ের ঢালে মাঝে মাঝে রয়েছে ইনকাদের পরিত্যক্ত চাষাবাদের নিদর্শন।
অদ্ভুত এ শহর। কুসকো থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে হুয়াইনাপিচু ও মাচুপিচু পাহাড়ে, প্রায় ৮ হাজার ফিট উঁচুতে অপূর্ব সুন্দর এ শহর। ধারণা করা হয় পনেরশ’ শতাব্দীতে তৈরি। ওপর থেকে মনোরম দৃশ্য, দুর্লভ দেয়াল, পাহাড়ের ঢালে চাষবাস ব্যবস্থার জন্য আজও এই শহরটি সপ্তম আশ্চর্যের একটি হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত।
পাহাড়ের উপর এ পুরীতে ১৫০টিরও বেশি ভবন, যা সম্রাটদের ও অন্যান্য ইনকাদের থাকার ঘর, ছেলে-মেয়েদের আলাদা আলাদা পাঠাগার, সূর্য মন্দির, সেরিমনিয়াল সাইট, টেরাস চাষাবাদ ব্যবস্থা, টেরাস চাষাবাদের ধাপে ধাপে কৃষকদের থাকার ঘর, দূর পাহাড় থেকে ড্রেইন করে ১৬টি জলের কল, ফোয়ারা আরও কত কি! ধারণা করা হয়, সম্রাটরা বিশেষ বিশেষ কোনো উৎসব পালন করতে এখানে আসতেন।
তখন তো লোহা অথবা চাকা চালিত যানবাহনের ব্যবহার ছিল না, কী করে ওরা এত উপরে সম্পূর্ণ একটি নগরী বানিয়ে ফেলেছিল? কেন এই রাজপুরী পরিত্যক্ত হয়েছিলো এখনও তা রহস্যজনক।
ধারণা করা হয়, ১৫৭২ সালে ইনকা সম্রাজ্যের পতনের পর এখানকার ইনকারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। ইনকাদের সমাজ ব্যবস্থায় সবকিছুর মালিকানা ছিল রাষ্ট্রের। অনেকটা
রাজতন্ত্র এইজন্য যে, ইনকা সম্রাটের ছেলেই সম্রাট হবার অধিকার রাখত। তবে জানা যায় অনেক সম্রাটদের কনকুবাইন বা রক্ষিতা থাকত। সম্রাট হবার অধিকার শুধু বৈধ স্ত্রীর পুত্রের থাকতো।
ঘোর অমানিশা নেমে আসে ১৫২৭ সালে ইনকা সম্রাট হুয়াইনা কাপাকের মৃত্যুর পর। তার দুই পুত্র হুয়াস্কা ও আতাউল্পা মাঝে পাঁচ বছরের জন্য উত্তরাধিকার নিয়ে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়।
বারবার স্পানিশ আক্রমণেও সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পরে।
আর ১৫৩৭ সালে ইনকা সম্রাট হুয়ানা ক্যাপাকের তৃতীয় পুত্র মানকো অন্যান্য বংশধর এবং ইনকা রিফুজিদের নিয়ে ভিলাকাবাম্বা নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে।
দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার সেদিনও ছিল। ইনকাদের হত্যা করে, ধর্মান্তরিত করে সেদিনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ওদের কৃষ্টি ও সভ্যতাকে। থেমে গিয়েছিল ওদের বাঁশির সুর আর রঙ-বেরঙ কাপড় পরিহিত পাহাড়ি নাচ।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল: cdmridha@gmail.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |