মালয়েশিয়া প্রবাসীদের রিহায়ারিং করার আহ্বান

মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে পাসপোর্ট ও রিহায়ারিং সম্পন্ন করে বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ।

রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2017, 12:42 PM
Updated : 2 July 2017, 03:46 AM

শনিবার বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) হেদায়াতুল ইসলাম মন্ডল এ আহ্বান জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩০ জুন ই-কার্ড দেওয়া বন্ধ হলেও রিহায়ারিং চালু থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যারা ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের দ্রুত বাংলাদেশ হাই কমিশন হতে পাসপোর্ট করে রিহায়ারিং সম্পন্ন করে বৈধ হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা বৈধ উপায়ে মালয়েশিয়ায় এসেছেন (স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া) বা অতীতে বৈধ শ্রমিক হিসেবে থাকলেও এখন অবৈধ, তারা নির্দিষ্ট মালিকের মাধ্যমে এখনও মাইইজি’র মাধ্যমে রিহায়ারিং করার সুযোগ নিতে পারেন। অথার্ৎ রিহায়ারিং এর শর্তগুলো মেনে এ প্রকল্পের বৈধ হওয়ার সুযোগ এখনো আছে।”

মালয়েশিয়ায় বিদেশি অবৈধ শ্রমিকের বৈধ হওয়ার জন্য টেম্পোরারি পাস ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড নেওয়ার সুযোগ শেষ হয়েছে ৩০ জুন মধ্যরাতে। ১ জুলাই থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সে দেশের দি স্টার পত্রিকা।

ই-কার্ড নেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি বলে জানান মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী। তবে বাংলাদেশির সংখ্যা কতো উল্লেখ করেননি তিনি। সংখ্যায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল ও অন্যান্য দেশের শ্রমিক।

ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী অবৈধ প্রবাসীদের নিবন্ধনের এ চিত্র দেখে ‘হতাশ’ বলে জানাচ্ছে মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকাগুলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি অনেকবার ই-কার্ড নেওয়ার সময়সীমার উপর জোর দিয়েছি। এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। সময়সীমা শেষ হওয়ার সাথে সাথে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে এবং অভিযানে অবৈধ শ্রমিক নিয়োগদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি যারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা লোকদের চাকরি দিয়েছে তারাও রেহাই পাবেন না।”

এ দিকে শেষ তিনদিন মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের পুত্রজায়া অফিসে অবৈধ শ্রমিক এবং নিয়োগদাতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। তারা শেষ সময়টাতে ই-কার্ডের নিবন্ধনের জন্য হাজির হয়েছে।
 

ই-কার্ড নেওয়ার সময় সুযোগ শেষ হলেও মালয়েশিয়ার শিল্প-মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন দাবি করেছে এ সময় আরো বাড়ানোর জন্য। তবে, এখনো পর্যন্ত এ দাবির পক্ষে সাড়া দেননি অভিবাসন বিভাগ।

দি স্টার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশি খবরে জানা যায়, ই-কার্ড নেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর ধরপাকড়ের জন্য প্রথম অভিযানটি হয় সেলাংগর প্রদেশের পোর্ট সিটি ক্লাং এর কাপারে। সেখানে ফার্নিচার ও প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিকদের আবাসস্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের দু’শ ঊনচল্লিশ জন শ্রমিকের কাগজ-পত্র পরীক্ষা করে একান্নজন অবৈধ শ্রমিক আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। 

ই-কার্ড বা অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খবরাখবর নিয়ে জানা যায়,  মালয়েশিয়ায় কর্মরত বা অবস্থানরত বাংলাদেশিসহ বিদেশি অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ‘রিহায়ারিং’ নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়। এ রিহায়ারিং এর মাধ্যমে বৈধ হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত ছিলো সংশ্লিষ্ট শ্রমিক বৈধ পথে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে হতে হবে। মানে নৌ পথে বা কোন কাগজ-পত্র ছাড়া প্রবেশকারীরা বাদ যাবেন।

শিক্ষার্থী ভিসায় প্রবেশকারীরাও অযোগ্য বলে বিবেচিত ছিলো। রি-হায়ারিং করতে অবশ্যই পাসপোর্ট দেখাতে হবে। এ সব শর্তের কারণে রিহায়ারিং-এ অধিকাংশ শ্রমিক নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হন। পরে মালয়েশিয়া সরকার সে সুযোগ আরো বাড়িয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান রিহায়ারিং প্রকল্পের সাথে ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড নামের আরেকটি সুযোগ দেন।

এতে অবৈধ শ্রমিকদের টেম্পোরারি পাস হিসেবে ই-কার্ড দেওয়া হয়। ই-কার্ডের মেয়াদ থাকবে আগামী বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে যাদের পার্সপোট নেই তারা নতুন পাসপোর্ট করে রিহায়ারিং প্রকল্পের মাধ্যমে বৈধ হবেন।

নতুন এ প্রকল্পে কোন প্রকার কাগজ-পত্রহীন শ্রমিক, শিক্ষার্থী ভিসায় এসে অবৈধ হয়ে যাওয়া বা অবৈধ পথে মালয়েশিয়া আসা শ্রমিকরা বৈধ মালিকের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ই-কার্ড নিতে পেরেছেন বলে জানা গেছে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!